প্রশ্নফাঁস, শিক্ষক কারাগারে

রংপুরের বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষার পৌরনীতি বিষয়ের দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগে এক প্রভাষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই শিক্ষকের নাম আবু তাহের (৪২)। শনিবার আদালতের মাধ্যমে তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে ওই কেন্দ্রে পৌরনীতি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন রাতেই বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মুহম্মদ মাজেদ আলী খান বাদী হয়ে আবু তাহেরের বিরুদ্ধে বদরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে ওই পরীক্ষাকেন্দ্রের সমন্বয়কারী প্রভাষক ফরিদুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছেন। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি পরীক্ষা চলছিল। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পৌরনীতি প্রথম পত্র এবং বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা ছিল। ওই দিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে বদরগঞ্জ থানা থেকে দুই বিষয়ের প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। দুপুর ১২টার দিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের গোপন সংবাদ পেয়ে বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে আসেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রংপুরের আঞ্চলিক পরিচালক মো. আজিজুল হক। তিনি বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের সমন্বয়কারী প্রভাষক ফরিদুল ইসলামের কাছে পৌরনীতির দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র দেখতে চান। এ সময় ফরিদুল ইসলাম প্রশ্নপত্রের আংশিক খোলা প্যাকেট তাঁকে দেন। পরে আঞ্চলিক পরিচালক প্রশ্নপত্র গুনে প্যাকেটে থাকা ১০০টি প্রশ্নপত্রের বদলে পান ৯০টি। এরপরই তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বিষয়টি জানান।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন কলেজের গণিত বিষয়ের প্রভাষক আবু তাহের। তিনি প্যাকেট খুলে ১০টি প্রশ্ন বের করে টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার্থীদের দিয়েছেন। এরপর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

থানাহাজতে আটক আবু তাহের শনিবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত নই। পরীক্ষা কেন্দ্রের কোনো দায়িত্বেও ছিলাম না। প্রশ্ন থাকে কেন্দ্রসচিব ও সমন্বয়কারীর দায়িত্বে। সেখানে আমি প্রশ্ন কীভাবে পাব? আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে।’

বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মাজেদ আলী খান বলেন, ‘আমি ঢাকায় এক মাসের প্রশিক্ষণ শেষে গত শুক্রবার বদরগঞ্জে এসেছি। কেন্দ্রসচিবের দায়িত্বে ছিলেন কলেজের উপাধ্যক্ষ মুহম্মদ গোলজার হোসেন প্রামাণিক। ঘটনার দিন আমি বদরগঞ্জে এসে জানতে পারি প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ স্বীকার করায় প্রভাষক আবু তাহেরের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে।’

তবে কেন্দ্রসচিব বলেন, তিনি কেন্দ্রসচিব হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন না।

দায়িত্বরত কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রংপুরের আঞ্চলিক পরিচালক মো. আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবশ্যই এর দায় পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন এড়াতে পারেন না। কিন্তু এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব ইউএনওর। কারণ তিনি পরীক্ষা কেন্দ্রের সভাপতি। তিনি কেন নেননি তা আমার জানা নেই।’

পরীক্ষা কেন্দ্রের সভাপতি ও ইউএনও মো. রাশেদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রসচিবসহ পরীক্ষায় দায়িত্বরত শিক্ষকদের অব্যাহতি এবং ওই কলেজের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্র বাতিল করা হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে একজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনি গ্রেপ্তারও হয়েছেন। এর সঙ্গে যদি আরও কেউ জড়িত থাকেন, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতারুজ্জামান প্রধান বলেন, আবু তাহেরকে একমাত্র আসামি করে মামলা হয়েছে। তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।