উন্নয়নকাজে 'জীবন অচল'

পয়োনালা সংস্কারের জন্য খুঁড়ে রাখা হয়েছে সড়ক। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী। গত বুধবার খিলক্ষেতে।  ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
পয়োনালা সংস্কারের জন্য খুঁড়ে রাখা হয়েছে সড়ক। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী। গত বুধবার খিলক্ষেতে। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

খিলক্ষেত রেলক্রসিং থেকে লেকসিটি কনকর্ড এবং বনরূপা হাউজিং থেকে বেপারীপাড়া পর্যন্ত সড়ক পয়োনালা সংস্কারের জন্য খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে খিলক্ষেতের বাসিন্দাদের।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘পরিকল্পনাহীন’ খোঁড়াখুঁড়ি, খনন করা মাটি না সরানো, পানিনিষ্কাশনের বিকল্প ব্যবস্থা না করা, কাজের ধীরগতি ও পয়োনালার পাইপ এনে রাস্তায় দীর্ঘদিন ফেলে রাখার কারণে এলাকাবাসী পাঁচ মাস ধরে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মী বলেন, এলাকায় পানিনিষ্কাশনের নালা নেই। তাই পয়োনালার পানি সড়কের খোঁড়া অংশে চলে আসে। পানি সরিয়ে কাজ করতে গিয়ে গতি কমে যাচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, খিলক্ষেত রেলক্রসিং বাজার থেকে নামাপাড়া, বোটঘাট, কবরস্থান সড়ক হয়ে লেকসিটি কনকর্ড পর্যন্ত সড়কে পয়োনালা সংস্কারের কাজ চলছে। এই অংশের কোথাও সড়ক খুঁড়ে পাইপ বসিয়ে মাটি ভরাট করা হয়েছে। কোথাও পাইপ বসানো হলেও মাটি ভরাট করা হয়নি। লেকসিটি কনকর্ড থেকে কবরস্থান এলাকা পর্যন্ত পাইপ বসানোর কাজ প্রায় শেষ। বর্তমানে খিলক্ষেত মধ্যপাড়া, বটতলা, নামাপাড়া এলাকায় কাজ চলছে। এখানে সড়কের পুরোটা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। খনন করা মাটি রাখা হয়েছে সড়কের দুপাশে। এতে সড়ক দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। পথচারীদের চলতে হচ্ছে সড়কে রাখা মাটির স্তূপের ওপর দিয়ে। এরই মধ্যে সড়কের কোনো কোনো অংশে জমে আছে নালার পানি। সেখানে ইট বিছিয়ে চলার পথ করে নিয়েছে স্থানীয় লোকজন।

রাস্তার দুই পাশে এলোপাতাড়ি ফেলে রাখা হয়েছে বড় বড় কংক্রিটের পাইপ।  ছবি: প্রথম আলো
রাস্তার দুই পাশে এলোপাতাড়ি ফেলে রাখা হয়েছে বড় বড় কংক্রিটের পাইপ। ছবি: প্রথম আলো

বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে খিলক্ষেত মধ্যপাড়া, নামাপাড়া, বটতলা, বালুর মাঠ এলাকার বাসিন্দাদের। তাদের হেঁটে চলাচল করতে হয়। এতে নারী, শিশু ও বয়স্কদের বেশি কষ্ট হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দারা বলেন, প্রায় তিন মাস এই অংশে পয়োনালা সংস্কারের কাজ চলছে।

মধ্যপাড়ার বাসিন্দা ইমতিয়াজ আলী বলেন, ‘খুব কষ্টে আছি। উন্নয়নকাজ করতে গিয়ে মানুষের জীবন একবারে অচল কইরা দিসে।’ তিনি আরও বলেন, সঠিক পরিকল্পনা করে কাজ করলে এমন ভোগান্তি হতো না।

বটতলার বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, পাঁচ মাস ধরে রাস্তা বন্ধ। একটি এলাকার প্রধান রাস্তা যদি পাঁচ মাস বন্ধ থাকে, তাহলে এলাকাবাসীর কী দুরবস্থা হয়, তা চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না।

বনরূপা হাউজিং প্রকল্প থেকে খিলক্ষেত খাঁ-পাড়া মোড় পর্যন্ত পাইপ বসানোর কাজ শেষ। তবে সড়ক সংস্কারের কাজ এখনো শুরু হয়নি। তাই ওই পথেও কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।

লেকসিটি সড়কে সংস্কারের কারণে পয়োনালার পানি জমে পাশের এই সড়কও প্রায় অচল
লেকসিটি সড়কে সংস্কারের কারণে পয়োনালার পানি জমে পাশের এই সড়কও প্রায় অচল

দেখা গেছে, বোটঘাট এলাকায় সড়ক খুঁড়ে পাইপ বসানোর কাজ চলছে। পথচারীরা পাশ দিয়ে কোনোমতে হেঁটে চলাচল করছে। কোনো ধরনের যানবাহন যাওয়ার উপায় নেই রাস্তাটি দিয়ে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্র জানায়, খিলক্ষেত প্রধান সড়কের লেকসিটি কনকর্ড এলাকা পর্যন্ত এবং বনরূপা হাউজিং থেকে বেপারীপাড়া পর্যন্ত পয়োনালাসহ সড়কের উন্নয়নকাজের উদ্বোধন করা হয় গত বছরের ২৫ অক্টোবর। কাজের অংশ হিসেবে ২৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার সড়কে পয়োনালা নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। তা ছাড়া ১৯ হাজার ৪৭৫ বর্গমিটার সড়ক কার্পেটিং এবং ৭ হাজার ৫২০ বর্গমিটার সিসি ঢালাই করা হবে। কাজ শেষ হওয়ার কথা এই বছরের জুনের মধ্যে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আসিফ ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল ওয়াহাবের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ডিএনসিসির ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিন্নাত আলী বলেন, প্রায় ৭০ শতাংশ পয়োনালা নির্মাণের কাজ শেষ। বাকি কাজও শিগগিরই শেষ হয়ে যাবে। এরপর সড়ক সংস্কার করা হবে। তিনি বলেন, উন্নয়নকাজে একটু ভোগান্তি হবেই। কিছুদিন কষ্ট সহ্য করলে এর সুফল এলাকাবাসীই ভোগ করবে। তবে এলাকাবাসীর ভোগান্তি কমাতে যেখানে যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেখানেই তাৎক্ষণিক সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।