'দুস্থ বিধবা-স্বামী পরিত্যক্তা' না হয়েও ভাতা নেন

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ৪৫ জন নারীর বিরুদ্ধে ‘দুস্থ বিধবা-স্বামী পরিত্যক্তা’ না হয়েও বছরের পর বছর ধরে ভাতা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সমাজসেবা বিভাগ থেকে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এই ভাতা নেওয়ার কার্ড পেয়েছেন তাঁরা। উপজেলার মাঠপর্যায়ের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

তবে স্থানীয় চেয়ারম্যানরা দাবি করেছেন, তাঁরা দায়িত্ব গ্রহণের আগে এই কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। ৪৫ জনের মধ্যে বেশির ভাগেরই স্বামী বর্তমান থাকলেও বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্ত হিসেবে ভাতা নিচ্ছেন। কেউ কেউ বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা হওয়ার পর এই কার্ড পান। পরে তাঁরা আবার বিয়ে করলেও কার্ডটি ফেরত না দিয়ে নিয়মিতভাবে ভাতা নিতে থাকেন। তবে এ সংখ্যা বেশি নয়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাহানারা বেগম নামের এক নারী স্বামীর মৃত্যুর পর প্রায় ১৮ বছর আগে ২০০০ সালে ‘দুস্থ বিধবা-স্বামী পরিত্যক্তা’ হিসেবে ভাতার কার্ড পান। তাঁর বাড়ি উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের মীরের দেউলমুড়া গ্রামে। একই উপজেলার ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের ভাতহাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরমহল বেগমও ওই বছর এই ভাতা কার্ড পান। স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তবে পরবর্তী সময়ে জাহানারা ও নুরমহল আবার বিয়ে করলেও কার্ডটি ফেরত না দিয়ে দীর্ঘ বছর ধরে ভাতা নিয়ে চলেছেন। তবে এঁদের মতো নারীর সংখ্যা বেশি নয়।
ঘুড়কা ইউনিয়নের পাঁচজন—সাবিনা, বুলবুলি, রাশিদা খাতুন, সফেদান, জ্যোৎস্না, ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের আর্জিনা ও তারার মতো বেশির ভাগই স্বামী থাকা অবস্থায় শুরু থেকেই এ ভাতা নিয়ে আসছেন।


তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ৪৫ জন নারী বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা না হয়েও বছরের পর বছর ধরে এই ভাতা নিয়ে আসছেন।

গতকাল রোববার রায়গঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কাছে দেওয়া প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে ২ হাজার ৮৫৭ জন ‘দুস্থ বিধবা-স্বামী পরিত্যক্তা’ নারী এ ভাতা ভোগ করছেন। তাঁরা প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা পান।

বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রায়গঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আমিরুল আলম গত ২৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলার সব ইউনিয়নের মাঠকর্মীদের এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে উপজেলার পাঙ্গাসী ও ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নে ১৫ জন করে, নলকা ইউনিয়নে ১০ জন এবং ঘুড়কা ইউনিয়নে পাঁচজনকে পাওয়া যায়, যাঁরা স্বামী বর্তমান থাকা অবস্থায় ‘দুস্থ বিধবা-স্বামী পরিত্যক্তা’ হিসেবে ভাতা নিচ্ছেন। এসব কার্ড ২০০০ থেকে ২০০৯ সালে দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তাঁরা কেউ এর সঙ্গে যুক্ত নন বলে দাবি করেন। তাঁরা বলেন, তাঁরা দায়িত্ব নেওয়ার অনেক আগে এই কার্ডগুলো বিতরণ করা হয়েছে। বরং তাঁরা এসে বিষয়টি সমাজসেবা দপ্তরের নজরে আনেন।

নলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার সরকার বলেন, ওই কার্ডগুলো ফেরত নিয়ে প্রকৃত দুস্থ বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের দেওয়া হবে।

রায়গঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আমিরুল আলম বলেন, ‘দুস্থ বিধবা-স্বামী পরিত্যক্তা’ ভাতার কার্ড বিতরণে নানা অভিযোগ পাওয়ার পর এ বিষয়ে তদন্ত করা হয়। এখন পর্যন্ত চারটি ইউনিয়নের ৪৫ জন নারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। বাকি পাঁচটি ইউনিয়নে এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইকবাল আখতার বলেন, এ কাজে দোষী ব্যক্তি ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।