মাগুরায় দুই পক্ষের সংঘর্ষ, নিহত ১

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় দুই দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। শ্রীপুর, মাগুরা, ৭ এপ্রিল। ছবি: কবির হোসেন
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় দুই দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। শ্রীপুর, মাগুরা, ৭ এপ্রিল। ছবি: কবির হোসেন

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় বিবদমান দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় অন্তত ১০ জন আহত হন। আজ শনিবার সকালে শ্রীপুরের সবদালপুর ইউনিয়নের কাবিলপুর গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম মো. আনিসুর রহমান (৩৫)। তিনি কাবিলপুরের পাশে মোর্তজাপুর গ্রামের মো. হারুন মোল্লার ছেলে।

এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাতজনকে আটক করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ১০টি গুলি ছোড়ে পুলিশ। সকাল আটটা থেকে শুরু হওয়া ওই সংঘর্ষ থেমে থেমে চলছেই। এ সময় অন্তত ২০টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। সংঘর্ষে দুই পক্ষে সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। সংঘর্ষে জড়িত দুই পক্ষই আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে জানা গেছে।

পুলিশ জানায়, এ অঞ্চলের গোষ্ঠীগত সামাজিক দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। তুচ্ছ অজুহাতে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মাঝে এ সংঘর্ষ-মারামারি হলেও মূলত এটি সামাজিক বিরোধ। আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। স্থানীয় নিরীহ মানুষ প্রতিদিন যার শিকার হচ্ছে।

গ্রামীণ ওই বিরোধ চলছে সবদালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরোল মোল্লা ও ইউনিয়নের আমতৈল ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। রফিকুল ইসলামের পক্ষে স্থানীয়ভাবে নেতৃত্ব দেন ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হাই, আওয়াল মোল্লা ও অন্যরা। আর বর্তমান চেয়ারম্যানের পক্ষে রয়েছেন ইউপির সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হান্নান, হারুন অর রশীদ ও অন্যরা। আজকের সংঘর্ষের সময় নিহত মো. আনিসুর রহমান বর্তমান চেয়ারম্যান নুরোল মোল্লার সমর্থক।

এ ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ইমলাল মোল্লা (৩৮) ও কুদ্দুস মোল্লাকে (৩৫) মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুই পক্ষের সহস্রাধিক মানুষ গ্রামীণ এই সংঘর্ষে অংশ নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। থেমে থেমে সংঘর্ষ ভাঙচুর-লুটপাট চলছে। পুলিশ একদিকে গেলে অন্যদিকে হামলা, মারামারি, লুটপাট হচ্ছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১০টি গুলি ছুড়েছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে সাতজনকে আটক করা হয়েছে।

জেলা পুলিশের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ছয়রুদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভাঙচুর-লুটপাটের খবর পেলেই সেখানে যাচ্ছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাবুবুর রহমান দুপুরে বলেন, ওই ঘটনায় মামলা হয়নি। লাশ সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই সবদালপুর ইউনিয়নের কাজলী, কাবিলপুর, মোর্তজাপুর—এ অঞ্চলে গ্রামীণ বিরোধ চলে আসছিল। গ্রামীণ ওই বিরোধে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫টি খুন ও শতাধিক মারামারি, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গত ৭ মার্চ সন্ধ্যায় কাজলী গ্রামে উইলিয়াম নামের এক যুবক প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন। তাঁকে কুপিয়ে তাঁর দুটি পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। তিনি এখন ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনার পর এলাকায় চরম উত্তেজনা চলছিল। ছোটখাটো মারামারি লেগে ছিল। আজ সকাল আটটার দিকে কাজলী, মোর্তজাপুর, কাবিলপুরসহ আশপাশে অন্তত পাঁচ গ্রামের দুই দল মানুষ কাবিলপুর গ্রামে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।