দুই মিনিটে এক রোগী ভর্তি

>
  • আক্রান্ত রোগীদের ৩০ শতাংশই শিশু।
  • ৩৫ শতাংশ রোগী আসছে তীব্র ডায়রিয়ার লক্ষণ নিয়ে।
  • তীব্র ডায়রিয়ায় শরীর থেকে দ্রুত পানি বের হয়ে যায়।
  • গত বছর এই সময়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম ছিল।

রাজধানী ও এর আশপাশে হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) মহাখালী হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর ভিড় বেড়েছে। গত তিন দিনের হিসাবে দেখা গেছে, প্রতি দুই মিনিটে একজন করে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

আইসিডিডিআরবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আক্রান্ত রোগীদের ৩০ শতাংশই শিশু। অন্যদিকে ৩৫ শতাংশ রোগী আসছে তীব্র ডায়রিয়ার লক্ষণ নিয়ে। তীব্র ডায়রিয়ায় শরীর থেকে দ্রুত পানি বের হয়ে যায়। অল্প সময়ে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। গত বছর এই সময়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম ছিল।

রোগী নিবন্ধনের তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, দক্ষিণখান, বাড্ডা, লালবাগ, মিরপুর, মুলাইদ, মোহাম্মদপুর, রমনা থেকে বেশি রোগী হাসপাতালে আসছে। কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ থেকেও রোগী আসছে।

আইসিডিডিআরবির মুখ্য চিকিৎসক ও হাসপাতালের প্রধান আজহারুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গরম এখনো সেইভাবে পড়েনি। অথচ হঠাৎ করেই ডায়রিয়ার রোগী বেড়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, পানির কারণে এটা হচ্ছে। মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে না।’

গতকাল শনিবার বেলা তিনটায় হাসপাতালে গিয়ে রোগীর ভিড় দেখা যায়। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, ব্যক্তিগত গাড়িতে রোগী আসছে। মূল হাসপাতালে জায়গা না হওয়ায় বারান্দা, লবি ও গবেষণার জন্য নির্ধারিত স্টাডি ওয়ার্ডে বাড়তি শয্যা দিয়ে রোগীর চিকিৎসা চলছে। রোগী বাড়তে পারে, এই আশঙ্কায় আইসিডিডিআরবির মূল ভবনের নিচতলায় বিভিন্ন জায়গায় শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আশকোনার ১০ বছরের ঈশানকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয় গতকাল বেলা সাড়ে তিনটায়। তার মা প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার দুপুরের পর থেকে ঈশান বারবার পাতলা পায়খানা করছে। কেন, তা বুঝতে না পেরে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন।

স্টাডি ওয়ার্ডেশুক্রবার ভর্তি হয়েছেন একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক। তাঁর বাসা মীরবাগ এলাকায়। বাসায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত আরও তিনজন। অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় শুধু তিনি হাসপাতালে এসেছেন। তিনি বলেন, পানির কারণে তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের এলাকার পানিতে দুর্গন্ধ। এমনকি এলাকায় জারে বিক্রি হওয়া পানিতেও দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। একই ওয়ার্ডে রামপুরার উলন রোডের একজন নারী বলেন, গত বছর বাড়ি বাড়ি ডায়রিয়া দেখা দিয়েছিল। এ বছরও শুরু হয়েছে।

আইসিডিডিআরবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে রোগী বাড়তে শুরু করেছে। ওই দিন ৬২২ জন রোগী ভর্তি হয়। পরের দিন ২৪ ঘণ্টায় ৭৮৮ জন রোগী ভর্তি হয়। গতকাল শনিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত ভর্তি হয় ৪৩১ জন। নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা বলেছেন, গড়ে প্রতি দুই মিনিটে একজন করে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

এ বছর ব্যাপকভাবে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে কি না, জানতে চাইলে আজহারুল ইসলাম খান সরাসরি হ্যাঁ বা না বলেননি। তিনি বলেছেন, ‘গত বছর এই সময় রোগী অনেক কম ছিল।’ তবে রোগী আরও বাড়লে তাদের চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তুতি কর্তৃপক্ষ নিয়েছে বলে তিনি জানান। এই হাসপাতালে সব শ্রেণির রোগীকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ডায়রিয়া রোগীকে না বলা হয় না।

করণীয়: ডায়রিয়া থেকে দূরে থাকার জন্য ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও নিরাপদ খাদ্যের ওপর জোর দিয়েছেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ ও বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন এস কে রায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঋতু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়াতে গরম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রোগ-জীবাণুর বিস্তার ঘটে। খাবার সহজে নষ্ট হয়। এই সময় বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুতে হবে। পানির উৎস হতে হবে নিরাপদ।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। ডায়রিয়া দেখা দিলে বিধি মেনে স্যালাইন খেতে হবে। অবস্থার উন্নতি না হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে যেতে হবে। রাস্তার উন্মুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। তাঁরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব আছে। নিরাপদ পানির সংকট আছে, এমন এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি সরবরাহ করতে হবে। রেডিও, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে সচেতনতামূলক বার্তা অচিরেই প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।