বিউটিকে বাবা হত্যা করেছেন, জানতেন না মা

বিউটি আক্তারের মা হুসনা বেগম আগে জানতেন না তাঁর স্বামী সায়েদ আলী মেয়ের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আদালতে স্বীকারোক্তির পর তিনি এ খবর জানতে পেরেছেন। রোববার কারাগারে স্বামীর সঙ্গে দেখা শেষে হুসনা বেগম প্রথম আলোকে এ কথা বলেন।

কারাগারের দর্শনার্থী সেলে হুসনা বেগম ও সায়েদ আলী সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কথা বলেন। এ সময় তাঁদের ছোট দুই সন্তানও সঙ্গে ছিল বলে জানিয়েছেন জেলার শওকত হোসেন মিয়া।

কারাগার থেকে বেরিয়ে হুসনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর স্বামী বারবার বোঝাতে চেয়েছেন তিনি বিউটিকে হত্যা করেননি। ময়না মিয়া তাঁর মাথা এলোমেলো করে দিয়েছে। বিউটির ধর্ষণের বিষয়টি তাঁর মাথা আরও আউলা করে দিয়েছে।’

রোববার দুপুরে ব্রাহ্মণডোরা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। গ্রামের লোকজনের সঙ্গে বিউটির হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে কেউই কথা বলতে চাননি। নিহত বিউটি আক্তারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিউটির দাদা সঞ্জব আলী (৮০) ছাড়া আর কেউ ঘরে নেই। সঞ্জব আলী বলেন, শনিবার রাত থেকে হুসনা বেগম তিন সন্তানসহ বাড়িতে নেই। তাঁরা কোথায় আছেন তা তিনি জানেন না। বিউটি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সঞ্জব আলী বলেন, তিনি কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না তাঁর ছেলে নিজের মেয়েকে হত্যা করেছেন। তিনি বলেন, এর পেছনে অন্য কেউ জড়িত, তাঁর ছেলে নয়।

এর কিছুক্ষণ পরে হবিগঞ্জ শহর থেকে বাড়িতে ফেরেন বিউটির ভাই সাদেক আলী (১৭)। সে প্রথম আলোকে জানায়, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার বাবা বা যে–ই জড়িত থাকুক, সে ও তার পরিবার এর সঠিক বিচার দেখতে চান।

সেখানকার ইউপি সদস্য ফরিদ মিয়া বলেন, তাঁরা সায়েদ আলীকে একজন সহজ–সরল দিনমজুর মানুষ হিসেবেই চেনেন। পাশাপাশি ময়না মিয়ারও আগে কোনো অপরাধে যুক্ত থাকার বিষয় তাঁদের জানা নেই। ফরিদ মিয়া বলেন, অপরাধী যে–ই হোক, আমরা তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এদিকে বিউটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন সপ্তাহ খানেক আগে আদালতে পৌঁছেছে। শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি আনিসুর রহমান রোববার প্রথম আলোকে বলেন, এ প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডের আগে বিউটিকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। তবে আদালতে বাবুল মিয়া প্রথম দফায় ধর্ষণ ও অপহরণের কথা স্বীকার করেছেন। তবে হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনো পুলিশের কাছে পৌঁছেনি বলে ওসি জানান।

ওসি আরও বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তাঁদের তদন্ত শেষ পর্যায়ে। এখন একজন অপরাধীকে (পেশাদার খুনি) তাঁরা গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আশা করা যায়, শিগগিরই তাঁরা তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবেন।

গত ২১ জানুয়ারি প্রতিবেশী বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে বিউটিকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় বিউটির বাবা ৪ মার্চ হবিগঞ্জ আদালতে একটি মামলা করেন। এ মামলায় তিনি বাবুল মিয়া (৩৫) ও তাঁর মা একই ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য কলমচান বিবিকে (৫৫) আসামি করেন। গত ১৭ মার্চ দুপুরে বিউটি আক্তারের মরদেহ পাওয়া যায় শায়েস্তাগঞ্জ থানার ছাতাগর্ত হাওরে। এ ঘটনায় গত ১৮ মার্চ বিউটি আক্তারের বাবা বাদী হয়ে বাবুল মিয়া ও তাঁর মা কলমচান বিবিসহ ছয়জনের নামে ও অজ্ঞাত আরও পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় কলমচান শুরুতেই গ্রেপ্তার হন। পরে বাবুল মিয়াকে ৩০ মার্চ র‍্যাব সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে।

সর্বশেষ এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বিউটির বাবা সায়েদ আলী ও তাঁদের প্রতিবেশী ময়না মিয়া গ্রেপ্তার হন। গত শনিবার আদালতে তাঁরা দুজনই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন বলে পুলিশ জানায়। একই ঘটনায় আদালতে রাজসাক্ষী দিয়েছেন বিউটির নানি ফাতেমা বেগম ও ময়না মিয়ার স্ত্রী আছমা আক্তার।