সড়ক সংস্কারে বাড়ির মালিকেরা

ডিআইটি প্রজেক্টের সড়কগুলো চলাচলের উপযোগী নয়। বাড়ির মালিকেরা মিলে সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। গতকালের ছবি।  প্রথম আলো
ডিআইটি প্রজেক্টের সড়কগুলো চলাচলের উপযোগী নয়। বাড়ির মালিকেরা মিলে সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। গতকালের ছবি। প্রথম আলো

বাড্ডা ইউনিয়ন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাভুক্ত হয়েছে বেশ কয়েক মাস হলো। কিন্তু সেখানে এখনো কোনো উন্নয়নকাজ শুরু করা হয়নি। গেল বর্ষায় কাদা ও জলাবদ্ধতা বেশ ভুগিয়েছে এলাকাবাসীকে। তাই আসছে বর্ষার আগেভাগেই রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন বাড্ডার দক্ষিণ বারিধারা আবাসিক এলাকার বাড়ির মালিকেরা।

দক্ষিণ বারিধারা আবাসিক এলাকাটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) একটি প্রকল্প, যা মেরুল ‘ডিআইটি প্রজেক্ট’ নামে পরিচিত। ডিএনসিসির আওতাভুক্ত হয়েছে গত জুলাইতে।
দক্ষিণ বারিধারা সোসাইটির সদস্যরা জানান, ডিআইটি প্রজেক্টে ৮০০-এর বেশি হোল্ডিং রয়েছে। বাসিন্দা ৪০ হাজারের বেশি। তাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে প্লট মালিক সমিতি ও বিভিন্ন বাড়ির মালিকেরা দুই সপ্তাহ আগে এখানকার আটটি সড়কের পয়োনালা সংস্কার ও সড়ক পাকা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ কাজে রাজউক কিংবা সিটি করপোরেশনের কোনো সহযোগিতা বা অর্থায়ন হচ্ছে না।

গতকাল শনিবার ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ডিআইটি প্রকল্প এলাকার ১৭টি সড়কের মধ্যে অধিকাংশই মাটির রাস্তা। এবড়োখেবড়ো রাস্তা দিয়ে যান চলাচলে তীব্র ঝাঁকুনি হয়। গাড়ির চাকা আটকে যায় গর্তে। ৮ নম্বর সড়কের বাসিন্দা রওশন আরা বলেন, সড়কগুলো খুবই নিচু ও ভাঙাচোরা, বর্ষাকালে এ সড়কে হাঁটার কোনো উপায় থাকে না। রাস্তা কোমরসমান ময়লা পানিতে ডুবে যায়। পানি কমলেও দীর্ঘদিন ধরে কাদা সরে না।

ডিআইটি প্রকল্প এলাকায় বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। সড়কের দুরবস্থার কারণে শিক্ষার্থীদেরও বেশ কষ্টের মধ্যে চলাচল করতে হয়। এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৬ সালে বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে টাকা তুলে ডিআইটি প্রজেক্টের বেশ কিছু সড়ক সংস্কার করা হয়েছিল। এবারও একই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ডিআইটি প্রজেক্টের ১০ নম্বর সড়কের সিরাজমিয়া মেমোরিয়াল মডেল স্কুলের সামনে থেকে বাড্ডা থানা পর্যন্ত লিংক রোডটি সংস্কারের কাজ করছে দক্ষিণ বারিধারা সোসাইটি। এর বাইরে বাকি গলিপথগুলো সংস্কার হচ্ছে বাড়ির মালিকদের উদ্যোগে।

গতকাল দেখা যায়, ১২ নম্বর সড়কের পূর্বাংশে সিমেন্টের ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। সেখানকার একটি বহুতল ভবনের মালিক মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘বর্ষায় কাদা ও পানির কারণে বাড়ি থেকে বের হওয়ার অবস্থা থাকে না। মসজিদে যাওয়া যায় না। বাড়িভাড়া নিতেও মানুষ আসে না। ভাড়াটে যাঁরা আছেন, তাঁরাও থাকতে চান না। এসব কারণে এই সড়কের বাড়ির মালিকেরা মিলে রাস্তা পাকা করার উদ্যোগ নিয়েছি। যে পরিমাণ খরচ হবে, বাড়ির মালিকেরা তা সমানভাবে বহন করবেন।’

দক্ষিণ বারিধারা সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের উদ্যোগে এর আগেও একবার এলাকার কয়েকটি সড়ক সংস্কার করা হয়েছিল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই এলাকার অবস্থান ভালো। বাড়িগুলো বড় পরিসর নিয়ে ভালোভাবে তৈরি হয়েছে। এই এলাকায় একটি থানা আছে। কিন্তু রাস্তাগুলো চলাচলের উপযোগী নেই। এ কারণে প্লট মালিক সমিতি ও বাড়ির মালিকেরা নিজেরা সংস্কারকাজ করছেন।

সোসাইটির সভাপতি হারুন-উর-রশীদ বলেন, ‘ডিএনসিসিতে অন্তর্ভুক্ত হলেও এখনো তাদের পক্ষে উন্নয়ন বা সংস্কারকাজ শুরু হয়নি। তবে শিগগিরই রাজউক এই জায়গা ডিএনসিসিকে বুঝিয়ে দিতে পারে। তখন সিটি করপোরেশন কাজ করলে করবে, তার আগে আমরা নিজেদের চলাচলের সুবিধার জন্য কাজ করছি।’

এই এলাকাটি ডিএনসিসির ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাড্ডা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ওই এলাকা বাড্ডা ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে থাকবে। এ সময়ের মধ্যে সব ধরনের উন্নয়নকাজ আপাতত বন্ধ। তবে এলাকাবাসী চাইলে নিজেদের এলাকার উন্নয়নকাজ করতে পারেন।