নোয়াখালীতে 'খ' সেটের পরিবর্তে 'ক' সেটে পরীক্ষা

নোয়াখালীর চাটখিল পাঁচগাঁও সরকারি মাহবুব কলেজ কেন্দ্রে ভুলে সোমবারের এইচএসসি পরীক্ষা ‘খ’ সেটের পরিবর্তে ‘ক’ সেটে নেওয়া হয়েছে। এদিন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষে বিকেলের দিকে ভুলের বিষয়টি জানাজানি হয়।

এ ঘটনায় কেন্দ্রটিতে আইসিটি বিষয়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ১ হাজার ২ জন পরীক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের মধ্যে উৎকণ্ঠার জন্ম নিয়েছে। অভিভাবকেরা এ ভুলকে কেন্দ্রসচিবের চরম দায়িত্বহীনতা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, এই ভুলের কারণে শিক্ষার্থীরা যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে বিষয়ে তাঁরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। একই সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ ঘটনায় কারও দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্য দিনের মতো সোমবার সকালে কলেজের অধ্যক্ষ ও কেন্দ্রসচিব মনিরুল ইসলামের মুঠোফোনে কোন সেটের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা আসে। সকালে অধ্যক্ষ কলেজে এসে পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক বিপ্লব চন্দ্র মজুমদারকে ‘ক’ সেটে পরীক্ষা নেওয়ার এসএমএস এসেছে জানিয়ে ওই সেটে (ক-সেট) পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলে বাড়িতে চলে যান। পরে কেন্দ্রসচিবের নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ‘ক’ সেটে পরীক্ষা নেন। কিন্তু পরীক্ষার পর একই উপজেলায় অন্য কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা ‘খ’ সেটে পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর এ কেন্দ্রের ভুলটি নজরে আসে।

চাটখিল পৌর এলাকার বাসিন্দা আবদুর রশিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন কেন্দ্রসচিব পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব রেখে বাড়িতে গিয়ে ঘুমাবেন, আর এদিকে শিক্ষার্থীরা ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বেন—এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক বিপ্লব চন্দ্র মজুমদার বলেন, সকালে কেন্দ্রসচিব কলেজে এসে তাঁকে ‘ক’ সেটে পরীক্ষা নিতে বলেছেন। তিনি সে অনুযায়ী ‘ক’সেটের প্রশ্নপত্রে তাঁরা পরীক্ষা নিয়েছেন। কিন্তু দুপুরে পর তাঁরা জানতে পারেন আশপাশের অন্যান্য কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়েছে ‘খ’ সেটে। এই ভুলের কারণে যাতে শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি না হয়, সে ব্যবস্থা তাঁরা নিচ্ছেন।

কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া দাবি করেন, তিনি পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রেই ছিলেন। তবে ভুল করে আগের দিনের এসএমএস পড়েছিলেন এবং সে অনুযায়ী ‘ক’ সেটে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলেছিলেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ রায়হানুল হারুন বলেন, কেন্দ্রসচিব সঠিকভাবে এসএমএস না দেখে ‘ক’ সেটে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের বাড়িতে চলে গেছেন। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এভাবে পরীক্ষা চলাকালীন কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে যেতে পারেন না।

নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আবদুর রউফ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তাঁরা বিষয়টি জানাবেন। তবে এই ভুলের কারণে যাতে পরীক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।