বাড়িওয়ালার প্রভাবে রাস্তা গেছে বেঁকে

মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় আলাতুন্নেছা স্কুল রোডটি প্রশস্ত করার সময় বাঁ পাশের বাড়িটি নামমাত্র ভাঙা হয়েছে। এর রেশ গিয়ে পড়েছে উল্টো দিকের দোকানের ওপর। সেখানে আড়াই ফুটের বেশি জায়গা ভাঙা পড়েছে।  ছবি: প্রথম আলো
মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় আলাতুন্নেছা স্কুল রোডটি প্রশস্ত করার সময় বাঁ পাশের বাড়িটি নামমাত্র ভাঙা হয়েছে। এর রেশ গিয়ে পড়েছে উল্টো দিকের দোকানের ওপর। সেখানে আড়াই ফুটের বেশি জায়গা ভাঙা পড়েছে। ছবি: প্রথম আলো

রাস্তা প্রশস্ত করতে দুই পাশের ভবন ও দোকান ভাঙা হচ্ছে। প্রতিটি ভবন ও দোকানের কমবেশি দুই ফুট জায়গা ভাঙা হয়েছে। কিন্তু একটি ভবনের মালিক জায়গা ছাড়তে নারাজ। অনেক জোরাজুরির পর ভবনের দেয়াল নামমাত্র ভেঙেছেন। এর রেশ গিয়ে পড়েছে উল্টো দিকের দোকানের ওপর। সেখানে আড়াই ফুটের বেশি জায়গা ভাঙা পড়েছে। সড়কটি বেঁকে যাচ্ছে।

মধ্যবাড্ডার আলাতুন্নেছা স্কুল রোড থেকে হাতিরঝিল সংযোগ সড়ক পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কটির সংস্কার করে প্রশস্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। স্থানীয় লোকজন বলেন, রাস্তাটি ১৭-১৮ ফুট প্রশস্ত। বাড্ডা ইউলুপ চালু হলে হাতিরঝিলের সঙ্গে বাড্ডায় চলাচলের জন্য এই সড়কটি অনেকে ব্যবহার করবেন। তখন সড়কটির ওপর চাপ বাড়বে। যানজটের বিষয়ে চিন্তা করে এলাকাবাসীর অনুরোধে রাস্তাটি ২২ ফুট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিন সপ্তাহ আগে শুরু হয়েছে দুই পাশের ভবন ও দোকান ভাঙা শুরু হয়।

গতকাল সোমবার ওই রাস্তায় গিয়ে দেখা যায়, একটি লাইব্রেরিতে নতুন করে ইট-সিমেন্ট দিয়ে দেয়াল তোলা হচ্ছে। দোকানের মালিক মো. করিম বলেন, চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তা বড় করার জন্য দোকানের সামনের দেড় ফুট জায়গা ভেঙে ফেলতে হয়েছে। এ কারণে নতুন করে পুরো দোকানের কাজ করতে হচ্ছে। এতে তাঁর দোকানের আয়তন কমেছে।

তিনি জানালেন, রাস্তার কাজের জন্য এ সড়কের অনেকেই এ রকমভাবে দোকানের সামনের জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন। ভবনগুলোও সামনের অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে সড়কের মুক্তিযোদ্ধা চত্বরের নামের জায়গার কিছু আগে দক্ষিণ পাশের একটি বাড়ির মালিক প্রয়োজনীয় জায়গা ছাড়ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন আশপাশের বাড়ির মালিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, বাড়ির মালিক তমিজুদ্দিন তমু স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখেন। ফলে তিনি প্রভাব খাটিয়ে নিজের ভবনের কয়েক ইঞ্চি জায়গা ছেড়েছেন। হুমকি-ধমকি দিয়ে বিপরীত দিকের দোকানের আড়াই ফুটের বেশি জায়গা ভাঙা পড়েছে।

যে দোকানটি বেশি ভাঙা পড়েছে সেটির মালিক বলেন, কথা ছিল সড়কের উভয় দিকে সমান পরিমাণ জায়গা ছাড়তে হবে। সে হিসেবে বিপরীত দিকের বাড়িটির যতটুকু ভাঙতে হবে, তা করা হচ্ছে না। কেবল বাড়ির সিঁড়ি পর্যন্ত কাটা হয়েছে। দোকান ভাঙার পর তিনি দেয়াল তুলেছিলেন। তখন তমিজুদ্দিন স্থানীয় বখাটে যুবকদের দিয়ে ওই দেয়াল ভেঙে ফেলেছেন এবং আরও প্রায় তিন ইঞ্চি জায়গা ছাড়তে বাধ্য করেছেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তমিজুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যতটুকু জায়গা ছাড়ার দরকার ততটুকু ছেড়েছি। জায়গা ছাড়িনি বলে যারা অভিযোগ করছে, তারা কেউই এখানকার বাড়ির মালিক নয়, দোকানদার ও ভাড়াটিয়া। কেউ যদি বলে থাকে ছাড়িনি তবে তাকে আমার সামনে নিয়ে আসেন।’

পাশের বাড়ির মালিক এ কে এম হাবিবুর রহমান বলেন, রাজউকের বাড়ি তৈরির নিয়ম অনুযায়ী যে পরিমাণ জায়গা ছাড়তে হয়, তমিজুদ্দিন সে পরিমাণ জায়গা ছাড়েননি।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র ওসমান গণি প্রথম আলোকে বলেন, এলাকার মানুষের সুবিধার কথা ভেবে রাস্তাটি প্রশস্ত করার কাজ করা হচ্ছে। কেবল কাজ শুরু হয়েছে। সামনে দরপত্র ডাকা হবে। তিনি বলেন, বাড়িগুলো তৈরির সময় রাজউক ঠিকমতো তদারক করেনি। এ কারণে কোনো কোনো বাড়ির ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। কেউ এখন জায়গা না দিতে চাইলেও তাঁরা তা পারবেন না। এলাকাবাসীর সুবিধার্থে তাঁদের জায়গা দিতে হবে।