উৎসবে বর্ণিল পাহাড়

ফুল বিজু উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সকালে খাগড়াছড়ির চেঙ্গী নদীতে ফুল ভাসাতে এসে পানি নিয়ে খেলছেন তরুণীরা। চেঙ্গী, খাগড়াছড়ি, ১২ এপ্রিল। ছবি: জয়ন্তী দেওয়ান
ফুল বিজু উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সকালে খাগড়াছড়ির চেঙ্গী নদীতে ফুল ভাসাতে এসে পানি নিয়ে খেলছেন তরুণীরা। চেঙ্গী, খাগড়াছড়ি, ১২ এপ্রিল। ছবি: জয়ন্তী দেওয়ান

নানা আয়োজনে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে শুরু হয়েছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রাণের উৎসব ‘বৈসাবি’। গতকাল বুধবার এই দুই জেলায় হয়েছে বর্ণিল শোভাযাত্রা, পানিখেলা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। এসব আয়োজনে যোগ দেন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর হাজারো নারী-পুরুষ।

বান্দরবান
বান্দরবানে ম্রোদের চাংক্রান উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে গতকাল থেকে পাহাড়িদের সপ্তাহব্যাপী সর্বজনীন বৈসাবি উৎসব শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা তরুণ-তরুণীরা ফুল ভাসিয়ে বিঝু-বিষু উৎসব শুরু করবেন। আগামীকাল শুক্রবার মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের মাধ্যমে মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব উদ্যাপন করা হবে।

গতকাল সকাল ৯টায় চিম্বুক পাহাড়ের ভাইট্যাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ম্রোদের চাংক্রান অনুষ্ঠান শুরু হয়। জেলা শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আশপাশের পাড়া থেকে বর্ণাঢ্য পোশাক ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে শত শত ম্রো শিশু-নারী-পুরুষ ও তরুণ-তরুণী অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান ও বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন, পুলিশ সুপার জাকির হোসেন, জেলা পরিষদ সদস্য সিংয়ং ম্রো, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের (কেএসআই) পরিচালক মংনুচিং মারমা প্রমুখ।

উৎসবে ম্রো বাঁশির সুরে তরুণ-তরুণীদের নাচ পরিবেশন, লাঠিখেলা ও ঐতিহ্যবাহী ম্রো খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া লোকনৃত্য, পিঠা তৈরি প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়।

আজ চাকমাদের ফুলবিঝু, তঞ্চঙ্গ্যাদের ফুলবিষুতে সকাল ৭টায় চাকমা ও ৮টায় তঞ্চঙ্গ্যা তরুণ-তরুণীরা শঙ্খ নদে ফুল ভাসিয়ে বৈসাবি উৎসবকে বরণ করে নেবেন। আগামীকাল ফুলবিঝুর জন্য তাঁরা বিঝুফুল দিয়ে ঘরদোর সাজিয়ে পূতপবিত্র করে তুলবেন। দুপুরে চাকমা যুবসংঘের উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা ও নাচ-গানের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।

খাগড়াছড়ি
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের উদ্যোগে সকালে পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে বের করা হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। এটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে খাগড়াছড়ি টাউন হল প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে উদ্বোধন করা হয় দিনব্যাপী বৈসাবি উৎসবের। বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এবং ফিতা কেটে উৎসবের উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. নুরুল আমিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার আলী আহম্মেদ খানসহ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

শোভাযাত্রা শেষে আয়োজন করা হয় পানি খেলা, গরয়া নৃত্যের। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে চেঙ্গী নদীতে ফুল ভাসানো হবে। ১৩ এপ্রিল চাকমা সম্প্রদায়ের ফুলবিঝু আর পয়লা বৈশাখ বা গজ্জাপয্যা। ওই দিন ঘরে ঘরে চলবে অতিথি আপ্যায়ন। সেই সঙ্গে সব বয়সী মানুষ নদী, খাল অথবা ঝরনায় গঙ্গা দেবীর পূজা আরাধনা করবেন। ১৪ এপ্রিল পালিত হবে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই ও পানি উৎসব।

এ ছাড়া গতকাল ত্রিপুরাদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসু উপলক্ষে গরয়া নৃত্য উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। য়ামূক সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে এটি অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে শহরের খাগড়াপুর কাচারপাড়া মাঠ প্রাঙ্গণে ‘৬ষ্ঠ গরয়া নৃত্য উৎসব’ উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদ সদস্য পার্থ ত্রিপুরা।