পুরান ঢাকায় হালখাতার প্রস্তুতি

পুরান ঢাকার দোকানগুলোতে চলছে হালখাতার আয়োজন।  ছবি: সাবরিনা ইয়াসমিন
পুরান ঢাকার দোকানগুলোতে চলছে হালখাতার আয়োজন। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমিন

শাঁখারীবাজারের শঙ্খশ্রী নামের দোকানে বসে কাগজের রঙিন বল, মুখোশ, ঘুড়ি ব্যাগে ভর্তি করছেন দোকানের কর্মচারী মোহাম্মাদ শাহাবুদ্দিন। পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ এই পণ্যগুলো কিনতে সিলেট থেকে এসেছেন মোহাম্মাদ সামাদ। যাচাই-বাছাই শেষে প্যাকেট করা আর হিসাব-নিকাশেই ব্যস্ত দেখা গেল দুজনকে। 

শাহাবুদ্দিন ও সামাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পণ্য কেনাবেচার ব্যস্ততা আর দোকান সাজানোর উপলক্ষ একটাই-আসছে পয়লা বৈশাখ আর হালখাতা।
বৈশাখ দুয়ারে কড়া নাড়ছে। আর রীতি অনুযায়ী পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, ইসলামপুর, মিটফোর্ড রোড, চকবাজারের দোকানগুলোতে হালখাতার আয়োজন করা হবে পয়লা বৈশাখের পরের দিন। তবে দোকানিরা বলছেন, দোকানগুলোতে হালখাতার প্রস্তুতি আর বৈশাখ বরণ করার উপকরণ তৈরির কাজ শুরু হয় সপ্তাহখানেক আগে থেকেই। তাই আমেজটাও শুরু হয় একটু আগেভাগে।
শঙ্খশ্রীর কয়েক দোকান পরই অমিয় গোল্ড মিউজিয়াম। নিজ দোকানের সামনে বসে দোকানে রং করার কাজ তদারক করছিলেন মালিক বিপ্লব সিংহ। তিনি বলছিলেন, প্রতিবছর এক সপ্তাহ আগে হালখাতার প্রস্তুতি শুরু করতে হয়। কারণ, অনেক কাজ করতে হয়। এখন চলছে রং আর ধোয়ামোছার কাজ। এরপর অলংকার রাখার শোকেস পরিষ্কার। আরেক দিন খুব সাবধানে অলংকার পরিষ্কারের কাজ করতে হয়। গ্রাহকদের দাওয়াত দেওয়ার কাজও আছে। এগুলো তো আর এক দিনে সম্ভব নয়।
পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার ও তাঁতীবাজার এলাকার বেশির ভাগই অলংকারের দোকান। সম্প্রতি এই এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ দোকানে রঙের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কর্মচারীরা। দোকানগুলোর শাটার ও দেয়ালে চলছে রঙের কাজ। কোনো কোনো দোকানে চলছে ধোয়ামোছার কাজও। দোকানের আসবাব বাইরে বের করে সেগুলোও পরিষ্কার করছেন দোকানিরা।
শাঁখারীবাজারের রুপা গোল্ড হাউসের সামনে দাঁড়িয়ে দোকানে রঙের কাজ তদারক করছিলেন মালিক সুব্রত দাস। তিনি জানালেন, হালখাতার দিন ব্যবসার মঙ্গল কামনা করে দোকানেই গণেশপূজা করা হয়। তাই দোকান পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। নতুন বছর নতুন করে শুরু করতে হয়। এ ছাড়া অনেক দূর থেকে গ্রাহকেরা আসেন। একটা উৎসব বিরাজ করে। সেই জন্যই দোকান রঙিন করতে হয়।
হালখাতা উপলক্ষে এরই মধ্যে দাওয়াত দেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে বলে জানান দোকানিরা। তাঁতীবাজারের অংকিতা গোল্ড হাউসের মালিক পবন চন্দ্র দাস বললেন, দাওয়াত কার্ড দেওয়া হালখাতার অন্যতম অনুষঙ্গ। এখন অনেকেই দূরের গ্রাহকদের ফোনে দাওয়াত দেয়। কিন্তু কার্ড না দিলে উৎসবের ভাব আসে না। ডাকযোগে কিংবা কুরিয়ার করে দূরের গ্রাহকদের দাওয়াত কার্ড দেওয়া হয়।
হালখাতার প্রস্তুতি যখন শুরু হয়ে গেছে, তখন পুরান ঢাকার দোকানগুলোও সাজানো হয়েছে বৈশাখ উদ্যাপনের নানা উপকরণ দিয়ে। মুখোশ, ঘুড়ি, বৈশাখী টুপি, একতারা, ডুগডুগি দিয়ে দোকান সাজিয়েছেন দোকানিরা। চকবাজার মসজিদের সামনে ইয়াকুব স্টোরে কথা হয় মালিক মোহাম্মাদ ইয়াকুবের সঙ্গে। তিনি বলেন, সপ্তাহখানেক আগে থেকেই দোকানগুলোতে উৎসবের উপকরণ তুলতে হয়। কারণ, এগুলো আবার পাইকারি বিক্রি হয়ে ঢাকার বাইরে যায়। ঢাকার ক্রেতারা কেনেন বৈশাখের দু-এক দিন আগে। বৈশাখ ও হালখাতার পুরো আমেজও শুরু হয় তখন থেকে।