শিশুদের পোশাকেই মায়েদের আনন্দ

বৈশাখের কেনাকাটা করতে নামী ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। গতকাল বেইলি রোডের একটি দোকানে।  ছবি: প্রথম আলো
বৈশাখের কেনাকাটা করতে নামী ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। গতকাল বেইলি রোডের একটি দোকানে। ছবি: প্রথম আলো
>

• বেচাবিক্রির বড় অংশজুড়ে শিশুদের পোশাক।
• আজ সব ধরনের পোশাকের বিক্রিই বাড়বে।

গরমের কথা মাথায় রেখে সুতির আরামদায়ক পোশাকই তৈরি করেছে বুটিকের দোকানগুলো। নকশায় ছিল লোকজ ঐতিহ্যের প্রাধান্য। দেশি বড় ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে বিক্রি ভালোই হয়েছে। এর মধ্যে বেশি বিক্রি হয়েছে শিশুদের পোশাক।

আগামীকাল শনিবার পয়লা বৈশাখ; বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করবে সারা দেশ। এ দিনের জন্য নতুন পোশাক কেনার ধারা শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর। তবে এবার এক মাস পর পবিত্র রমজান, এরপর ঈদ। তখন আবার পরিবারের সবার জন্য নতুন পোশাক কেনার বিষয়টি রয়ে গেছে ক্রেতাদের মাথায়। তার প্রভাব বাজারে কিছুটা পড়েছে বলে মনে করেন বিক্রেতারা।

দেশীয় বুটিকের দোকানগুলোর মধ্যে বেইলি রোডের কে ক্র্যাফট, নিপুণ, অঞ্জন’স, বিশ্ব রঙ ও বাংলার মেলায় কিছু ক্রেতাসমাগম দেখা গেছে গতকাল। এ ছাড়া শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, বসুন্ধরা সিটির দেশি দশ ও আড়ংয়ে ক্রেতাদের ভিড় ছিল। এসব দোকানে মেয়েদের শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজ, থ্রি-পিস, টপস, কুর্তি, ফতুয়া এবং এর সঙ্গে মিলিয়ে প্যান্ট, ঢোল পায়জামা, পালাজ্জো বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন বয়সী ছেলেদের পাঞ্জাবি-পায়জামা, ফতুয়া, টি-শার্ট, কিশোরদের পাঞ্জাবি, ফতুয়া, কিশোরীদের ফ্রক, সালোয়ার-কামিজ বিক্রি হতে দেখা যায়। এসব পোশাকে সাদা জমিনের ওপর লালের প্রাধান্য ছিল। তবে সাদা-হলুদ, সাদা-নীল, সাদা-বেগুনি পোশাকও ছিল চোখে পড়ার মতো।

ব্যবসায়ীরা জানান, বরাবরের মতো এবারও এপ্রিল মাসের ১ তারিখ থেকে দোকানে বৈশাখের পোশাক তুলেছেন তাঁরা। মূলত ১৩ তারিখ পর্যন্ত বৈশাখের কেনাকাটা চলে। অনেক দোকান ১০-২৫ শতাংশ ছাড়েরও ব্যবস্থা রেখেছে।

দাম নাগালের মধ্যে রাখার চেষ্টা ছিল বলে জানান দোকানিরা। শাড়ির দাম রাখা হয়েছে ১ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা, থ্রি-পিস ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। বয়সভেদে বাচ্চাদের পোশাকের দাম ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়।

বেইলি রোডের একটি বড় বুটিকের বিক্রয়কর্মী বললেন, এই সময় কাউন্টারে ভিড় লেগে যাওয়ার কথা। অথচ গত এক ঘণ্টায় এক-দুজন বিক্রেতা কিনেছেন। বৈশাখের পরই রমজান ও ঈদ বলে হয়তো অনেকেই কেনাকাটা করছেন না। এ কারণে অনেক দোকান বেশি পোশাকও তোলেনি।

তবে অঞ্জন’সের বেইলি রোড শাখার ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন বলেন, তাঁদের দোকানে বিক্রি ভালোই হয়েছে। এবার তাঁরা পোশাকে কিছু পরিবর্তনও এনেছেন বলে জানান। ব্যবহার করেছেন ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটির নকশাও। কাপড়ে সুতির প্রাধান্য স্পষ্ট। আয়োজন ও চাহিদা ছিল অ্যান্ডি কটন এবং ভয়েল কাপড়ের পোশাকেরও। এখানে সিল্ক বাদে শাড়ির দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার, পাঞ্জাবি ১ হাজার থেকে ৪ হাজার, থ্রি-পিস ২ হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার এবং শিশুদের পোশাক ৩০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। পোশাকে সাদা-লালের বাইরে কমলা, ম্যাজেন্টা, গোলাপি, নীল রঙের ব্যবহার চোখে পড়েছে।

উম্মে কুলসুম নামের এক নারী তাঁর সন্তান তাসফিয়া ইসলামকে নিয়ে ঘুরেছেন বেইলি রোডের বিভিন্ন বুটিকের দোকানে। শেষ পর্যন্ত পয়লা বৈশাখে মেয়ের স্কুলের অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য থ্রি-পিস কিনেছেন। নিজের জন্য শাড়ি আগেই কিনে রেখেছেন বলে জানান।

বেইলি রোডের গাঁওগেরাম নামের একটি বুটিকের দোকানে এসে চাকরিজীবী নওশীন সুলতানা তাঁর ছেলে আজফার আকিয়ারের জন্য পাঞ্জাবি দেখছিলেন। তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, পয়লা বৈশাখে বের হবেন তাঁরা। এ কারণে ছেলের জন্য পাঞ্জাবি দেখছেন।

গাঁওগেরাম দোকানের দায়িত্বে থাকা শরিফুল ইসলাম বলেন, তাঁর দোকান সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই খোলা থাকে। তবে বিকেলেই বেশি আসেন ক্রেতারা। তাঁর দোকানে এবার শিশুদের পোশাকই বেশি বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি।

বেইলি রোডে কে ক্র্যাফটের বিক্রয়কর্মী শামসুন্নাহার শিরীন বললেন, এখন বৈশাখ মানেই কেনাকাটার একটি উপলক্ষ। সব ধরনের রঙের পোশাক তাদের বিক্রি হচ্ছে। তবে লাল-সাদার আধিপত্য আছে। তিনি বলেন, গতবারের চেয়ে দোকানে বিক্রি কমেছে। কারণ, দোকানের সংখ্যা বেড়েছে। ক্রেতারা ভাগ হয়ে গেছে। দেশীয় বুটিকের দোকানগুলোও অনলাইনে কেনাকাটার সুযোগ রেখেছে। অনেকেই দোকানে ঘুরে ঘুরে কেনার চেয়ে অনলাইনে কেনাকাটা করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন।

তাঁদের দোকানে হাফ সিল্কের শাড়ির চাহিদা আছে বলে জানান শামসুন্নাহার। কারণ, এটা সংগ্রহে রাখা যায় এবং যেকোনো অনুষ্ঠানে পরা যায়।

বসুন্ধরা সিটিতে কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিমা দাস বললেন, তিনি লম্বা কামিজ কিনবেন। তাঁর মতে, এখন মেয়েরা কেবল শাড়ি পরে উৎসব উদ্যাপন করে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, পোশাকটি আরামদায়ক হচ্ছে কি না। অনেক মেয়ে শাড়ি পরে সারা দিন কষ্ট করার চেয়ে আরামদায়ক ফতুয়া-ঢোল পায়জামা ও পালাজ্জো পরে।

গতকাল দোকানগুলো ঘুরে কেনাকাটার ধরন দেখে মনে হয়েছে, মা-বাবারা পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনে নিজেদের চেয়ে ছোটদের আনন্দের কথাই বেশি ভাবছেন। কারণ, বেচাবিক্রির বড় অংশজুড়ে ছিল শিশুদের পোশাক। বিক্রেতারা আশা করছেন, পয়লা বৈশাখের আগে আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সব ধরনের পোশাকের বিক্রিই বাড়বে।