হামাগুড়ি দিয়ে পরীক্ষা দিতে যান আছিয়া

এভাবেই হামাগুড়ি দিয়ে চলছেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার আছিয়া খাতুন। ছবি: প্রথম আলো
এভাবেই হামাগুড়ি দিয়ে চলছেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার আছিয়া খাতুন। ছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌরসভার চরচালা মহল্লার আবদুর রহমানের মেয়ে আছিয়া খাতুন। তিন মাস বয়সে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হন আছিয়া। এতে তাঁর দুই পা অবশ হয়ে চিকন হয়ে যায়। এরপর থেকে সে দুই হাত আর হাঁটুর ওপর ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করেন। এভাবেই তিনি স্কুল ও কলেজে ক্লাসও করেছেন। শত বাধা পেরিয়ে এবার তিনি এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।

২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় আছিয়া উপজেলার আলহাজ সিদ্দিক উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৩.১১ পেয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এবার তিনি বেলকুচি মডেল কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। সম্প্রতি ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা শেষে বেলকুচি মহিলা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে কথা হয় আছিয়ার সঙ্গে। কাটফাটা রোদের মধ্যে সবার পেছনে দুই হাত আর হাঁটুর ওপর ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে থেকে বের হতে দেখা যায় তাঁকে।

আছিয়া জানান, পাঁচ বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি চতুর্থ। তাঁর বাবা দিনমজুর আর মা গৃহিণী। সেলাইয়ের কাজ করে তিনি লেখাপড়ায় খরচ চালান। ছোট ভাই ফিরোজ কলেজে যাওয়া-আসায় তাঁকে সাহায্য করে। তাঁর বাবা-মাও মাঝেমধ্যে কলেজে যাতায়াতে সহায়তা করেছেন। অদম্য শিক্ষার্থী আছিয়া খাতুন বলেন, ‘বাবা-মা ও ভাই না থাকলে হয়তো আমি লেখাপড়া করতে পারতাম না। আমার অন্য ভাইবোনেরা লেখাপড়া করছে।’ জীবন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ‘কারও করুণা চাই না, তবে সহযোগিতা চাই।’

তিন মাস বয়সে পা বিকল হয়ে যায় আছিয়ার। এরপর থেকে হামাগুড়ি দিয়ে চলছে তাঁর জীবনসংগ্রাম। ছবি: প্রথম আলো
তিন মাস বয়সে পা বিকল হয়ে যায় আছিয়ার। এরপর থেকে হামাগুড়ি দিয়ে চলছে তাঁর জীবনসংগ্রাম। ছবি: প্রথম আলো

আছিয়ার বাবা দিনমজুর আবদুর রহমান বলেন, তিন মাস বয়সে আছিয়ার দুটি পা অবশ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ ১০ বছর তাকে বিছানায় থাকতে হয়। বিছানার ওপর তার থাকা-খাওয়া ও পায়খানা সবই সারতে হয়।’ চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘দুই হাতের ওপর ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে যখন সে চলতে শিখল, তখন ছোট ভাইদের স্কুলে যাওয়া-আসা দেখে তারও লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ জন্মায়। পরে ১২ বছর বয়সে স্থানীয় আনন্দ স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেওয়া হয়। এভাবেই সে লেখাপড়া করে আজ এ পর্যায়ে এসেছে।’

বাবার দরিদ্র সংসারে আছিয়া সেলাইয়ের কাজ শিখে নিজেই জামাকাপড় তৈরি করেন। এই উপার্জন দিয়েই তাঁর লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম গোলাম রেজা বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী আছিয়ার জন্য বিধি মোতাবেক সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ অতিরিক্ত সময়ও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বেলকুচি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফসানা ইয়াসমিন বলেন, মেয়েটির পা দুটি বিকল হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মনোবলের একটুও কমতি নেই। তাঁর সঙ্গে বিস্তারিত কথা হয়েছে। ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর জন্য প্রতিবন্ধী কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে।