'চাঁদার জোরে' চলছে অবৈধ অটোরিকশা

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ধানমন্ডি ১৫ নম্বর সড়ক। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ২০-২৫টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা। সব কটিই ঢাকা জেলা থেকে নিবন্ধিত। মিটার নেই একটিরও। আইন অনুযায়ী, অটোরিকশাগুলোর রাজধানীতে চলার সুযোগ নেই। কিন্তু চলছে নিয়মিত।
বৈধ অটোরিকশার মালিক ও চালকেরা বলছেন, বিষয়টি বহুবার প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কীভাবে চলে এমন অটোরিকশা-জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক বরকত উল্লাহ বলেন, অবৈধ অটোরিকশাগুলো চালাতে প্রতি মাসে তিন থেকে ছয় হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। পুলিশ এই চাঁদার ভাগ পায়। ফলে এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ধানমন্ডি ১৫ নম্বর থেকে অটোরিকশাগুলো চলে রায়েরবাজার পর্যন্ত। দুটি অটোরিকশার চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই রুটে অবৈধ অটোরিকশাগুলো চালাতে দৈনিক ১৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। পুলিশ কোনো বাধা দেয় কি না জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, চাঁদার টাকার ভাগ পুলিশও পায়। তাই সমস্যা হয় না।
আবার রায়েরবাজার থেকে আঁটিবাজার পর্যন্ত রুটেও একইভাবে চলে ঢাকা জেলা থেকে নিবন্ধন নেওয়া অটোরিকশা। এই রুটের একাধিক চালক জানিয়েছেন, অটোরিকশাগুলো চালাতে প্রতিদিন ১৭০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। রিপন তালুকদার নামের এক ব্যক্তি অটোরিকশাগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন।
যোগাযোগ করা হলে রিপন তালুকদার নিজেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেন। টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, টাকা তিনি নিজে তোলেন না। পুলিশসহ আরও লোকজন এই টাকার ভাগ পান।
জানা গেছে, রুট ধরে এভাবে চাঁদা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো রসিদ বা প্রমাণ রাখা হয় না। টাকা নেওয়া হয় অনেকটা গোপনে।
শুধু এই এলাকা নয়, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, জিগাতলা থেকে হাজারীবাগ হয়ে ঝাউচর, ভাটারার নতুনবাজার থেকে বনানী, খিলগাঁওয়ের জোড়পুকুর মাঠ থেকে দক্ষিণ বনশ্রী, গোড়ান, সিপাহীবাগ, যাত্রাবাড়ী থানার কাজলা ব্রিজ থেকে নারায়ণগঞ্জ, জুরাইন রেলগেট থেকে কেরানীগঞ্জ, ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার মোড় থেকে নন্দীপাড়া, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে ১৪ নম্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে অটোরিকশা চলে। অটোরিকশাগুলো ঢাকা জেলা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও মুন্সিগঞ্জ থেকে নিবন্ধন নেওয়া।
ঢাকা জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, নম্বর প্লেটে ঢাকা মেট্রো লেখা অটোরিকশাগুলোই কেবল ঢাকা শহরে চলতে পারবে। তিনি জানান, এমন অটোরিকশার সংখ্যা ১৩ হাজার ৬৪৯।
অবৈধভাবে কতটি অটোরিকশা চলে, তার সঠিক হিসাব কোথাও পাওয়া যায়নি। তবে জাকির হোসেন বলেন, এই সংখ্যা অন্তত ১২ হাজার। আর ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকনের মতে, ঢাকায় অবৈধভাবে চলা অটোরিকশা সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
জানতে চাইলে বিআরটিএর সচিব মুহাম্মদ শওকত আলী বলেন, রাজধানীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাতে রুট পারমিট, ফিটনেস সনদের প্রয়োজন হয়। অবৈধভাবে চলা অটোরিকশাগুলোর কোনো রুট পারমিট নেই। এগুলোর বিরুদ্ধে বিআরটিএ নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। বিআরটিএর পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ ও সিটি করপোরেশনও এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।
ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতি ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক বরকত উল্লাহ বলেন, ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক ও সার্জেন্ট এই অবৈধ অটোরিকশাগুলো চলতে সাহায্য করে। আগে পরিদর্শক ও সার্জেন্টের দেওয়া বিভিন্ন ছবিসংবলিত টোকেন নিয়ে অবৈধ অটোরিকশাগুলো চলত। এখন একটি কাগজে লেখা ফোন নম্বর দিয়ে অটোরিকশাগুলো চলে।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’