সম্পদ বেশি খালেকের, মামলা বেশি নজরুলের

তালুকদার আবদুল খালেক ও নজরুল ইসলাম মঞ্জু
তালুকদার আবদুল খালেক ও নজরুল ইসলাম মঞ্জু

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পাঁচ মেয়র প্রার্থীই কোনো না কোনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তবে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ব্যবসা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এখন তাঁর আয়ের উৎস বাড়িভাড়া। এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের বার্ষিক আয় বেড়েছে। বেড়েছে ব্যাংকে জমা টাকাও। নিজের নগদ টাকার পরিমাণ আগের চেয়ে কমলেও বেড়েছে স্ত্রীর। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগেও এগিয়ে তাঁর স্ত্রী।

নজরুল ইসলাম ২০০৮ সালে খুলনা-২ আসন থেকে সংসদ নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। তখন তাঁর জমা দেওয়া হলফনামার সঙ্গে বর্তমান হলফনামার বিশ্লেষণ করা হয়েছে। মাঝে আর কোনো নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হননি। তালুকদার আবদুল খালেক ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনে বাগেরহাট-৩ আসন থেকে প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন। তখন তাঁর জমা দেওয়া হলফনামার সঙ্গে বর্তমান হলফনামার বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পাঁচ মেয়র প্রার্থীর দুজন স্বশিক্ষিত, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা স্নাতক পাস এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুজাম্মিল হকের শিক্ষাগত যোগ্যতা ফাজিলে দেওবন্দ। বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে চারটি ও জাতীয় পার্টির এস এম শফিকুর রহমানের (মুশফিকুর) বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা আছে। খালেকের বিরুদ্ধে একসময় ৯টি মামলা থাকলেও এসব থেকে অব্যাহতি ও খালাস পেয়েছেন।

তালুকদার খালেকের বর্তমান হলফনামায় বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে প্রায় ৪১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। আগের হলফনামা অনুযায়ী আয় ছিল ৩৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। কৃষি, মৎস্যঘের, ব্যাংক সুদ এবং সাংসদ হিসেবে পাওয়া পারিতোষিক ও ভাতা থেকে এই আয় দেখানো হয়েছে।

মৎস্যঘের ব্যবসায়ী সাবেক মেয়র তালুকদার খালেকের হাতে নগদ টাকা রয়েছে ৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। আগের হলফনামায় ছিল ৮২ লাখ ৫৫ হাজার। আর স্ত্রীর নগদ অর্থ দেখানো হয়েছে ২ কোটি ১৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। আগে স্ত্রীর নামে নগদ টাকা ছিল ৪৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা।

খালেকের নামে তিনটি ব্যাংকে জমা আছে ২ কোটি ৪২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। আগে জমা ছিল ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বর্তমানে তাঁর স্ত্রীর নামে দুটি ব্যাংকে আছে ২০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। আগে ছিল ২৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ ছাড়া তালুকদারের এসবিএসি ব্যাংকে ২ কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে। নিজের ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ১০ লাখ টাকার এফডিআর ও ১৮ লাখ টাকার পোস্টাল এফডিআর রয়েছে। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, এফডিআর ও পোস্টাল এফডিআরের পরিমাণ ২০১৪ সালেও একই ছিল। আগে তাঁর স্ত্রীর ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র থাকলেও কোনো এফডিআর ছিল না। বর্তমানে স্ত্রীর ৪৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ১৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকার এফডিআর দেখানো হয়েছে। আগের ও বর্তমান হলফনামা অনুযায়ী স্ত্রীর ২৫ ভরি স্বর্ণ রয়েছে।

সম্পদ ও নগদ অর্থ বৃদ্ধির ব্যাপারে জানতে চাইলে তালুকদার খালেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংসদ সদস্য থাকার সুবাদে প্রতি বছর যে বেতন পাচ্ছি সেটা দিয়ে সংসার খরচ চলে যায়। ফলে গচ্ছিত টাকার পরিমাণ বাড়বে এটাই তো স্বাভাবিক।’

বিএনপির প্রার্থীর ব্যবসা বন্ধ

বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলামের বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। আর তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ২ লাখ ৮২ হাজার টাকা। হলফনামায় লেখা পেশা ব্যবসা, বর্তমানে ব্যবসা বন্ধ। এখন আয়ের উৎস বাড়িভাড়া।

নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার তাঁকে কোনো ব্যবসা করতে দেয় না। এ কারণে তাঁর সব ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে স্ত্রীর আয় ও বাড়িভাড়া দিয়েই সংসার চলছে। আর তাঁর বিরুদ্ধে সব মামলাই রাজনৈতিক।

খালেকের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম। গতকাল সোমবার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও খুলনার জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের কাছে এই অভিযোগ করে তিনি স্মারকলিপি দিয়েছেন।

অভিযোগে বলা হয়, তালুকদার খালেক সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট, নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, নওয়াপাড়া-ফকিরহাটের ইস্টার্ন পলিমার লিমিটেডের পরিচালক। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করেন। ইস্টার্ন পলিমারের ঋণ তথ্যও তাঁর হলফনামায় উল্লেখ করেননি। এ ছাড়া মনোনয়নপত্রে তাঁর ভোটার নম্বর উল্লেখ করেননি।

তবে হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ অস্বীকার করেন তালুকদার খালেক। বলেন, নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো টাকা পাওয়া যায় না। আর ইস্টার্ন পলিমারের কোনো ব্যাংক ঋণ নেই।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচনে ক্রমান্বয়ে ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। আসলে ক্ষমতার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁরাই বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন।