মামলা করে গরিব মানুষ

১৫ বছরে ঢাকার পাঁচটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ঢাকা মহানগর ও উপজেলা মিলিয়ে ৫৭টি থানা থেকে মামলা এসেছে। আরও আছে পুরোনো অখণ্ড উত্তরা থানার মামলা।
প্রথম আলোর দেখা ধর্ষণসংক্রান্ত মামলাগুলোর তিন-চতুর্থাংশ এসেছে ২৬টি থানা থেকে। এগুলোর বেশির ভাগে গরিব মানুষের ঘনবসতি আছে। অনেকগুলোই পোশাকশ্রমিক-অধ্যুষিত এলাকা।
মামলার সংখ্যায় এগিয়ে আছে মিরপুর (৪৫৮), সাভার (৩০৬), সবুজবাগ (২৫৯), খিলগাঁও (২৪৬) আর মোহাম্মদপুর (২৩৪) থানা।
প্রথম আলো ৫২টি মামলা খুঁটিয়ে দেখেছে। মাত্র দুটি মামলার ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা মধ্যবিত্ত পরিবারের। চারটির ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা নিম্নমধ্যবিত্ত। বাকি ৪৬টি মামলার ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা দরিদ্র পরিবারের-ছিন্নমূল, বস্তিবাসী, গৃহকর্মী, শ্রমজীবী বা পোশাকশ্রমিক।
বাংলাদেশ সেন্টার পর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার একসময় নিজে পোশাকশ্রমিক ও নেত্রী ছিলেন। তিনি বলছেন, যত মামলা হচ্ছে, ঘটনা তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। তাঁর কথায়, ‘এটা মহামারির মতো হয়ে পড়েছে।’ কিন্তু পোশাকশ্রমিকেরা লোকলজ্জায় প্রকাশ করেন না।
পোশাকশ্রমিকদের মামলাগুলোর অভিযোগে দেখা যায়, কখনো কাজ শেষে রাতদুপুরে বাড়ি ফেরার পথে মাস্তানরা পথ আটকে ধর্ষণ করেছে। ধর্ষণ করেছেন আস্থাভাজন ‘দেশি ভাই’, কারখানার তত্ত্বাবধায়ক, পাড়ার দোকানদার, কথিত বন্ধু বা প্রেমিক। কল্পনা আক্তার বলছেন, প্রেমের নামে দীর্ঘদিন শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে সরে পড়ছেন সহকর্মীরা। সন্তান হলে দায়িত্ব নিচ্ছেন না।
আর সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির বলেন, নারী শ্রমিকেরা স্বাধীন জীবন যাপন করেন, নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেন। অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীরা তাঁদের সরলতার সুযোগ নিয়ে থাকে।
প্রথম আলোর দেখা ধর্ষণসংক্রান্ত মামলাগুলোর ৩৩৫টি হয়েছে সরাসরি ট্রাইব্যুনালে। এগুলোর ৭০ শতাংশই হয়েছে ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২-এ। ধর্ষণসংক্রান্ত মামলা বেশি, এমন ১১টি থানা এই দুই ট্রাইব্যুনালের আওতায়ই পড়েছে।
সরাসরি ট্রাইব্যুনালে আবেদন করার একটা বড় কারণ, থানার মামলা নিতে না চাওয়া।