রানা প্লাজায় হতাহতদের স্মরণে কাঁথা প্রদর্শনী

রানা প্লাজা ধসের পাঁচ বছর পূর্তি সামনে রেখে আয়োজন করা হয়েছে ‘স্মৃতিকাঁথা ও কথা’ প্রদর্শনীর। ছবি: হাসান রাজা
রানা প্লাজা ধসের পাঁচ বছর পূর্তি সামনে রেখে আয়োজন করা হয়েছে ‘স্মৃতিকাঁথা ও কথা’ প্রদর্শনীর। ছবি: হাসান রাজা

ঢাকার সাভারের রানা প্লাজা ধসের পাঁচ বছর পূর্তি সামনে রেখে ‘মৃতদের স্মরণ করো জীবিতদের জন্য লড়াই করো’ স্লোগানে শুক্রবার ‘স্মৃতিকাঁথা ও কথা’ নামে এক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি।


প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন নিখোঁজ সমাপ্তি রানির মা ও আহত শ্রমিক রুনা রানি দাস। পরিকল্পনা ও কিউরেটিং করেন গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান ও আলোকচিত্রী তাসলিমা আখতার এবং আমেরিকার প্রবীণ কাঁথাশিল্পী রবিন বারসন।

রানা প্লাজার নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের ছবি কাপড়ে বসিয়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্য অনুযায়ী নানা অঞ্চলের কাঁথা সেলাই করেছেন পরিবারের সদস্যরা। এগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্মৃতিকাঁথা’। নিহত সদস্যদের নিয়ে ছোট ছোট রুমালে লেখা হয়েছে নিজেদের মনের কথা। সব মিলিয়ে এ আয়োজনের নাম রাখা হয়েছে ‘স্মৃতিকাঁথা ও কথা’।

সাভারের জামসিংয়ের নিহত আঁখির মা নাছিমা বেগম রুমালে মেয়ের ছবি বসিয়ে ছবির পাশে ফোঁড় দিয়ে লিখেছেন, ‘আমি তো আঁখির মা, এই সময় আসলে আমার অনেক কষ্ট হয়।’

নিখোঁজ শ্রমিক শান্তার বোন সেলিনা আক্তার স্মৃতির কাঁথায় তাঁর বোনের ছবি বসিয়ে রুমালে লিখেছেন, ‘চিরদিন যেন মনে রাখতে পারি ২৪ এপ্রিল।’

প্রদর্শনী চলাকালে গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান ও আলোকচিত্রী তাসলিমা আখতার বলেন, নিহত ব্যক্তিদের নিয়ে এই ছবি স্মৃতিকাঁথা প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য হলো ২৪ এপ্রিল ও হাজারো প্রাণ-স্বপ্ন হত্যার কথা যাতে আমরা ভুলে না যাই। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৭৫ জনের বেশি শ্রমিক প্রাণ হারান।

‘স্মৃতিকাঁথা ও কথা’ প্রদর্শনীতে হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা। ছবি: হাসান রাজা
‘স্মৃতিকাঁথা ও কথা’ প্রদর্শনীতে হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা। ছবি: হাসান রাজা

সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুর ইসলাম বলেন, সারা দুনিয়ার কারখানার ইতিহাসে রানা প্লাজা ধসের এই ঘটনা বিরল হলেও এখন পর্যন্ত সোহেল রানাসহ দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি হয়নি। এই স্মৃতিকাঁথা প্রদর্শনীর মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের আইন বদল এবং রানা প্লাজা-তাজরীন ফ্যাশনসের পুনরাবৃত্তি বন্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

নিহত শ্রমিক ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী চায়না বেগম বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে, কবে রানার বিচার হবে আর সাজা হবে আমরা জানি না। বেঁচে থাকতে রানাসহ দোষী ব্যক্তিদের বিচার দেখে যেতে পারব কি না আমরা সন্দিহান।’

বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত প্রদর্শনী চলাকালে অনেক দর্শনার্থীর সমাগম হয়। এ সময় নিহত রাব্বীর মা রাহেলা খাতুন, নিখোঁজ শান্তার বোন সেলিনা আক্তার, নিখোঁজ বিউটির স্বামী আলম মাতবর ও আহত শ্রমিক রুপালী আগত দর্শনার্থীদের সঙ্গে প্রদর্শনী নিয়ে নানা বিষয়ে কথা বলেন।