নির্মাণসামগ্রীর চাপে বিদ্যালয়ের দেয়াল ধসে শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ, আহত ৩

পাবনায় শহর এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়াল ধসে এক শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। পুরোনো দেয়ালটি ঘেঁষে রাখা নির্মাণসামগ্রীর চাপে তা ধসে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ শনিবার সকালে শিবরামপুর সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করে। এতে কিছু সময় সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

দেয়াল ধসে মারা যাওয়া শিক্ষার্থীর নাম আফরিন খাতুন (৯)। সে বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। আফরিন ওই মহল্লার আইয়ুব আলীর মেয়ে।
এতে আহত হয়েছে নিহত আফরিনের আপন বোনসহ তিনজন শিশু শিক্ষার্থী। আহত শিশুদের মধ্যে দুজনকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ও একজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত শিশুরা হলো আফরিনের ছোট বোন বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফসানা খাতুন (৭), মানিক হোসেনের ছেলে প্রথম শ্রেণির ছাত্র ইসমাইল হোসেন (৬) এবং আমিন উদ্দিনের ছেলে শিশু শ্রেণির ছাত্র আল-আমিন (৫)।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়টিতে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। ফলে দেয়াল ঘেঁষে বালুসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে। ঘটনার দিন সকালেও ট্রাকভর্তি বালু এনে দেয়ালের পাশে রাখা হয়। এর কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীদের কয়েকজন ওই দেয়ালের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেয়ালটি ধসে পড়ে। এতে চার শিক্ষার্থী আহত হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে আফরিন ও ইসমাইলের অবস্থার অবনতি ঘটে। তাদের দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কিছুক্ষণ পর আফরিন মারা যায়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল কবির সিদ্দিকী বলেন, দেয়ালটি বেশ পুরোনো ও দুর্বল ছিল। অসাবধানবশত ঘটনাটি ঘটেছে। আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঘটনার পর থেকে বিদ্যালয়টি বন্ধ রাখা হয়েছে।

হাসপাতালে গিয়ে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন পাবনার জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালামসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আহত শিশুদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছি। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের চিকিৎসার ব্যয় দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, দেয়ালধসের ঘটনা তদন্ত করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, দেয়ালধসের ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। শিগগিরই প্রতিবেদন দেওয়া হবে। ঘটনায় কারও গাফিলতি থাকলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।