খালেদার মুক্তি নয়, সুবিচার দাবিতে সোচ্চার হতে হবে

সিলেট জেলা বিএনপি আয়োজিত ‘ভিন্নমতাবলম্বীদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গুম ও আগামীর রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ছবি: প্রথম আলো
সিলেট জেলা বিএনপি আয়োজিত ‘ভিন্নমতাবলম্বীদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গুম ও আগামীর রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ছবি: প্রথম আলো

ঘরে কিংবা হলরুমে অনুষ্ঠান না করে রাজপথের দখল নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি না জানিয়ে তাঁর সুবিচারের দাবিতে সোচ্চার হতে হবে।

আজ শনিবার বিকেলে সিলেট জেলা বিএনপি আয়োজিত ‘ভিন্নমতাবলম্বীদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গুম ও আগামীর রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য জাফরুল্লাহ চৌধুরী এসব কথা বলেন।

বর্তমান সরকারের কাছে ইলিয়াস আলীসহ সব গুম হওয়া নেতা-কর্মীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে লাভ নেই উল্লেখ করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, কারণ এ সরকারকে পরিচালনা করছে ভারত। তাই সবার আগে দেশপ্রেমিক জনতাকে ভারতের বিরুদ্ধে জেগে উঠতে হবে। রাজনীতিতে প্রতিযোগিতার বিকল্প নেই। কিন্তু প্রতিহিংসার মাধ্যমে বিরোধী পক্ষকে গুম ও মামলা দিয়ে নিশ্চিহ্ন করার নোংরা রাজনীতি দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রয়োজন আন্দোলন।

ঘরে কিংবা হলরুমে প্রোগ্রাম নয়, রাজপথ দখল নিতে হবে—বিএনপির নেতা-কর্মীদের এ আহ্বান জানিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘রাজপথের আন্দোলনেই রাজনীতিতে পরিবর্তন আসতে বাধ্য। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি না জানিয়ে সুবিচারের দাবিতে সোচ্চার হতে হবে। সুবিচার নিশ্চিত হলে সাজা তো দূরের কথা, খালেদা জিয়ার কথিত দুর্নীতির মামলাটিই একেবারে উড়ে যাবে।’

জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল গাফফারের সভাপতিত্বে নগরের পূর্ব দরগাগেইট এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত আলোচনা সভায় জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ চরম ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। ভারত আমাদের দেশকে তাদের করদরাজ্যে পরিণত করতে তাদের গোয়েন্দা সংস্থা “র”-কে ব্যবহার করছে। সিলেটের জনপ্রিয় জননেতা এম ইলিয়াস আলীসহ সকল গুমের সঙ্গে ভারতের “র” জড়িত। ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে গণ-আন্দোলন তৈরি করায় ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে।’

২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে বিএনপির নেতা এম ইলিয়াস আলী ও গাড়িচালক আনসার আলী ‘নিখোঁজ’ হন। এর প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ৪ এপ্রিল একই এলাকা থেকে ‘নিখোঁজ’ হয়েছিলেন তাঁর অনুসারী হিসেবে পরিচিতি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সিলেট জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার হোসেন দিনার ও ছাত্রদলকর্মী জুনেদ আহমদ। বিএনপির কেন্দ্র থেকে শুরু করে সিলেট বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, বিরোধী রাজনীতি দমন করতে ইলিয়াসসহ চারজনকে সরকারই ‘গুম’ করেছে।

‘নিখোঁজ’ হওয়ার সময় ইলিয়াস আলী বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পাশাপাশি সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। চারদলীয় জোট সরকার আমলে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর) আসনের সাংসদ ছিলেন তিনি। ছয় বছরেও তাঁদের কোনো খোঁজ না পাওয়ায় এবার সিলেট থেকে ইলিয়াস আলীসহ ‘গুম’ হওয়া নেতা-কর্মীদের সন্ধান দাবি জোরালো করার প্রস্তুতিতে সিলেট জেলা বিএনপি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

আলোচনা সভায় সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ সিলেটের সভাপতি শামীমুর রহমান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. আশরাফ উদ্দিন আমন্ত্রিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন। ‘গুম’ হওয়া নেতা-কর্মীর পরিবার থেকে ‘নিখোঁজ’ ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদের বাবা চিকিৎসক মঈনুদ্দিন আহমদ, এম ইলিয়াস আলীর ভাগনি ফাতেমা বিনতিন, ইলিয়াস আলীর সঙ্গে ‘নিখোঁজ’ গাড়িচালক আনসার আলীর স্ত্রী মুক্তা বেগম ও ‘নিখোঁজ’ ছাত্রদলকর্মী জুনেদ আহমদের ছোট ভাই হাসান মঈনুদ্দিন আহমদ বক্তব্য দেন। তাঁরা বক্তব্য দেওয়ার সময় আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্নাকাটি করেন।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের সঞ্চালনায় সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিলেট বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুরুল হক, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, মহানগর সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।