মাদ্রাসায় লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো শিশুটিকে, শিক্ষক আটক

পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয় মাদ্রাসাশিক্ষার্থী জিম আক্তারকে। ছবি: সংগৃহীত
পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয় মাদ্রাসাশিক্ষার্থী জিম আক্তারকে। ছবি: সংগৃহীত

বাজারে দোকানের সামনে গিয়ে কাঁদছিল শিশুটি। পায়ে লোহার শিকলের এক প্রান্ত বাধা। আরেক প্রান্ত খোলা। দেখে বোঝাই যাচ্ছিল, সে এমন কোথা থেকে পালিয়ে এসেছে, যেখানে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। শিশুটির সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতাও পায় ওই বাজারের লোকজন। পরে পুলিশ খবর পেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায়। উদ্ধার হওয়া শিশুটির নাম জিম আক্তার (১০)। সে উপজেলার চলনালি গ্রামে স্থানীয় চলনালি মাদ্রাসায় পড়ে। একই উপজেলার কাছিকাটা গ্রামে জিমের বাড়ি। বাবা আইনুল হক বেঁচে নেই।

‘অবাধ্য’ হওয়ার কারণে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো বলে স্বীকার করেছেন ওই মাদ্রাসার শিক্ষক ইয়ারুল ইসলাম। পুলিশ পরে ওই শিক্ষককে আটক করে।

উদ্ধার হওয়া শিশুটির বরাতে গুরুদাসপুর থানার পুলিশ জানায়, চলনালি মাদ্রাসার শিক্ষক ইয়ারুল ইসলাম শিশুশিক্ষার্থী জিমকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতেন। মাদ্রাসার নির্দিষ্ট একটি কক্ষ থেকে বের হতে দিতেন না। দীর্ঘদিন এভাবে থাকার পর গত শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে জিম মাদ্রাসার অন্য শিক্ষার্থীদের সহায়তায় পালিয়ে এসে চাঁচকৈড় বাজারের একটি দোকানের বারান্দায় এসে আশ্রয় নেয়। স্থানীয় লোকজন সেখানে তাকে কাঁদতে দেখে পরে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। শিশুটির কাছে সবকিছু শোনার পর ওই রাতেই শিক্ষককে আটক করে পুলিশ।

খবর পেয়ে জিমের মা মিনিয়ারা বেগম থানায় এসে মেয়েকে বাসায় নিয়ে যান। তিনি জানান, মেয়েকে আরবি শেখানোর জন্য মাদ্রাসায় দিয়েছিলেন। সে মাদ্রাসায় থাকতে চাইত না। তাই বলে শিক্ষকেরা তাঁর মেয়েকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিলেন, এটা তিনি জানতেন না।

মিনিয়ারা বেগম জানান, তাঁর মেয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মেয়ের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন, তাকে দিন-রাত বেঁধে রাখা হতো। ভয়ে কেউ হুজুরদের বাধা দিত না। সে টয়লেটে যাওয়ার কথা বলে অন্য শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় পালিয়ে এসেছে।

এদিকে আটক শিক্ষক ইয়ারুল ইসলাম জানান, শিশুটি অবাধ্য ছিল। সে পড়ালেখা ফাঁকি দিতে প্রায়ই মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে বাড়ি চলে যেত। তাই তার মায়ের নির্দেশে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল।

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কুমার দাস জানান, আটক শিক্ষক ইয়ারুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।