বাড়ছে পানি, সুনামগঞ্জে হাওরের কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ
সুনামগঞ্জে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সুরমা নদীর পানি বেড়েছে। তাই হাওরের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের দ্রুত হাওরের পাকা ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে নদীর পানি বাড়লেও তাতে কৃষকদের আতঙ্কিত না হতে বলা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের কাছে সুরমা নদীর পানি উচ্চতা ২ দশমিক ৭৪ মিটার। ২০ এপ্রিল পানি উচ্চতা ছিল ১ দশমিক ৭৪ মিটার। তিন দিনে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১ মিটার। সুরমা নদীর পানির বিপৎসীমা হচ্ছে ৮ দশমিক ২৫ মিটার। আর হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের উচ্চতা সাড়ে ৬ মিটার। গত তিন দিনে সুনামগঞ্জ এবং পার্শ্ববর্তী ভারতের মেঘালয়ে ৫৭ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের উচ্চতার কাছাকাছি পানি চলে আসবে। তবে হাওরে এবার যেভাবে বাঁধ হয়েছে, তাতে ওই পানির চাপ সামলানো যাবে। যেহেতু হাওরে ৯০ শতাংশ ধান এখন পেকে গেছে, তাই দ্রুত সেই ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তবে হাওরপারের কৃষকেরা জানিয়েছেন, ধান পাকলেও শ্রমিক-সংকটের কারণেই মূলত কাটতে বিলম্ব হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন ধান লাগানোর কাজটি করলেও কাটার সময় বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এবার শুরু থেকেই হাওরে ধান কাটার শ্রমিক-সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় জেলার অন্য পেশায় যুক্ত শ্রমিকদের ধান কাটায় যুক্ত করার উদ্যোগ নিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলামও হাওরের পাকা ধান দ্রুত কাটার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষকদের।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরপাড়ের কৃষক আবদুল কাদির জানান, শ্রমিক-সংকটের কারণে হাওরে ধান কাটায় বিলম্ব হচ্ছে। তবু লোকজন ধান কাটছে। আর ১৫ দিন সময় পেলে হাওরের সব ধান গোলায় তোলা যাবে।
সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় গত বছর এ সময় ছিল ফসলহারা কৃষকদের হাহাকার ও কান্না। একের পর এক হাওরের ফসলহানিতে তখন দিশেহারা হয়ে পড়েন তাঁরা। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি ভালো। তাই গত বছরে নিঃস্ব কৃষকেরা এবার কষ্টে ফলানো সোনার ধান গোলায় তোলার চেষ্টা করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের প্রধান ফসল বোরো। জেলায় ছোট-বড় ১৫৪টি হাওরে বোরো ধানের আবাদ হয়। গত বছরের এপ্রিল মাসের অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার সব হাওরের বোরো ধান তলিয়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জেলার ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০টি কৃষক পরিবার। এ বছর ২ লাখ ২২ হাজার ৭১৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ২১ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফিরোজ খান আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুনামগঞ্জের হাওরে এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। মানুষ দ্রুত ধান কাটছেন। আমরাও কৃষকদের পাক ধান দ্রুত কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি।’
পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেছেন, ‘যেহেতু সুনামগঞ্জ এবং ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টি হচ্ছে, তাই সুরমা নদীর পানি বাড়বে। একই সঙ্গে হাওরে পানির চাপ সৃষ্টি হবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব ধান কেটে ফেলা উচিত। আমরা কৃষকদের সেই পরামর্শই দিচ্ছি।’