ভোটারদের কাছে আওয়ামী লীগের খালেক আন্তরিক আর বিএনপির মঞ্জু অমায়িক

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক  এবং বিএনপির প্রার্থী  নজরুল ইসলাম মঞ্জু
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক এবং বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু

তালুকদার আবদুল খালেকের বড় দিক হলো কাজের প্রতি তাঁর আন্তরিকতা। তাঁর দৃঢ় মনোবল। আর নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বড় গুণ তিনি সহজে সবার সঙ্গে মিশতে পারেন। তিনি অমায়িক।

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খালেক এবং বিএনপির প্রার্থী মঞ্জুকে নিয়ে এমনটাই মূল্যায়ন সেখানকার অনেকের।

সরেজমিনে কেসিসির বিভিন্ন এলাকায় ভোটার এবং নানা পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে এ দুই প্রার্থীর নানা তথ্য জানা গেছে। তাঁদের নানা ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি নির্বাচনকে ঘিরে নানা চ্যালেঞ্জের কথাও উঠে এসেছে মানুষের কাছ থেকে।

খুলনার সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান দুই দলের সেরা দুজনই দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। এ দুই প্রার্থীর ইতিবাচক দিক সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘খালেক সাহেবের দৃঢ়তা ও সততা সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক। আগেরবার তিনি যখন মেয়র ছিলেন, তখন কাজের প্রতি তাঁর আন্তরিকতাই দৃশ্যমান ছিল সবার কাছে। কাউকে যদিও কটু কথা বলেন সেটা কাজের জন্যই।’ নজরুল ইসলাম মঞ্জু সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘উনি সাংসদ থাকার সময় যেমন ছিলেন, এখনো তেমন। সবাই সহজেই এ সজ্জন মানুষটির কাছে যেতে পারেন।’

কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এই দুই প্রার্থীই ‘অনিচ্ছুক’ ছিলেন নির্বাচন করতে। নিজেরা দলের মনোনয়নই কেনেননি। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তেই দুজন প্রার্থী হয়েছেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই দুজন নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন দুজনই। এ প্রসঙ্গে দুজনই প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দুজনই নিজ নিজ দলের সভাপতি। মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। সে কারণে প্রস্তুতি কম হলেও ভোটের মাঠে কোনো সমস্যা হবে না।

কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে মনোনয়ন পাওয়ায় দলের ইচ্ছুক প্রার্থীদের কাছ থেকে নিরঙ্কুশ সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে অনেকে সন্দিহান। তবে এ ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের উদ্যোগেই অন্য প্রভাবশালী নেতাদের মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। এ দুই প্রার্থী দলের বিরোধীপক্ষকে নিজেরা কতটা দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাতে পারেন, সেটাই ওপরই ভোটের মাঠে তাদের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে।

প্রার্থী ও স্থানীয় বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতির প্রভাব থাকবে। বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘সারা দেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর সরকারি দলের অত্যাচার-নির্যাতনের জবাব এবারের নির্বাচনে খুলনাবাসী দেবে।’ মঞ্জু বলছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় তাঁর মুক্তির বিষয় নিয়ে দলটি নানা কর্মসূচি দিচ্ছে। কেসিসি নির্বাচনে খালেদা জিয়ার প্রতি সহমর্মী হয়ে সরকারকে জবাব দেবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির এ নেতা।

তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক মনে করেন, জাতীয় রাজনীতির প্রভাব খুলনার ভোটে অন্যভাবে পড়বে। তিনি বলেন, ‘খুলনার মানুষ উন্নয়ন চান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনার উন্নয়নে তাঁর আন্তরিকতা এরই মধ্যে প্রমাণ করেছেন। তাঁর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রতি খুলনাবাসী সমর্থন দেবেন।’

স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়েও দুই দলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য রয়েছে। উন্নয়ন প্রসঙ্গে নাগরিকদের মধ্যে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করাও দুই দলের প্রার্থীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারি দলের সমর্থক এবং স্থানীয় অনেকের বক্তব্য, খালেকের আমলেই খুলনা সিটিতে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। বিএনপির আমলে খুলনায় কোনো উন্নয়ন হয়নি। এ প্রসঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলেন, আওয়ামী লীগের উন্নয়ন দেখতে হলে তাকাতে হবে নিচে, আর বিএনপির উন্নয়ন দেখতে হলে তাকাতে হবে ওপরে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, শুধু রাস্তাঘাটের উন্নয়নই উন্নয়ন নয়। বিএনপির মেয়রদের উন্নয়নকাজের ফলে খুলনায় সুউচ্চ ভবন হয়েছে, মানুষের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হয়েছে।

নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে দুই দলই এখন নির্বাচনী ইশতেহার তৈরিতে ব্যস্ত। মহানগরকে নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ভাবনা তুলে ধরতে ইশতেহার তৈরি করছেন দুই প্রার্থী। ভোটারের জন্য আলাদাভাবে কী কী পরিকল্পনা রয়েছে, সেটাও উঠে আসবে ইশতেহারে।

স্থানীয় লোকজন মনে করছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দুই প্রার্থীর মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, সেটা নিয়েও অনেকের মধ্যে আশঙ্কাও রয়েছে। জেলায় বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত অনেক নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সরকারি দলের পক্ষ থেকে ওই সব মামলা ব্যবহার করে তাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কৌশল নিলে বিএনপির পক্ষে নির্বাচনের মাঠে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কী ভূমিকা নেয়, তার ওপরই নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও নিরপেক্ষতা নির্ভর করবে।