ঢাকায় ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় ৮০ গাছ ভেঙেছে

সড়কের পাশের গাছ উপড়ে এবং ডালপালা ভেঙে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনার পাশাপাশি প্রাণহানি ঘটছে। গত চার দিনে রাজধানীর ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় ৮০টি গাছ উপড়ে পড়ে। গতকাল ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের পেছনে সড়ক–ফুটপাতে গাছ পড়ে থাকতে দেখা যায়।  ছবি: প্রথম আলো
সড়কের পাশের গাছ উপড়ে এবং ডালপালা ভেঙে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনার পাশাপাশি প্রাণহানি ঘটছে। গত চার দিনে রাজধানীর ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় ৮০টি গাছ উপড়ে পড়ে। গতকাল ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের পেছনে সড়ক–ফুটপাতে গাছ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ছবি: প্রথম আলো
>
  • প্রতিবছর গাছ উপড়ে, ডাল ভেঙে হতাহতের ঘটনা ঘটছে
  • সড়ক ও ফুটপাতের পাশে কত গাছ আছে, সে পরিসংখ্যান নেই
  • গাছ কে লাগিয়েছে, কার গাছ সে বিষয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই
  • গাছের রক্ষণাবেক্ষণ কে করবে, তা নির্দিষ্ট করা নেই

রাজধানীর সড়ক ও ফুটপাতের পাশে কত গাছ আছে, এসব গাছ কে লাগিয়েছে, গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কার-এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। সড়কের পাশের কোন গাছ ঝুঁকিপূর্ণ, তা চিহ্নিত করারও কেউ নেই। প্রায়শই সড়কের পাশের গাছ উপড়ে এবং ডালপালা ভেঙে ছোট-বড় দুর্ঘটনার পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। গত চার দিনে ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৮০টি গাছ ভেঙে পড়ে।
হেলে পড়া, উপড়ে পড়া, মরা গাছ কাটার দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। এ জন্য করপোরেশনকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত গাছ কর্তনবিষয়ক কমিটির অনুমতি নিতে হয়।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ থেকে জানা যায়, কোনো গাছ ঝুঁকিপূর্ণ বা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কি না, তা শনাক্ত করার কোনো ব্যবস্থা সিটি করপোরেশনের নেই। কোনো গাছ ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে এলাকার লোকজন বা আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে সম্পত্তি বিভাগকে জানালে তারা ব্যবস্থা নেয়। তবে ঝড়ে উপড়ানো কোনো গাছ সড়কে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে সিটি করপোরেশন তাৎক্ষণিক তা সরিয়ে নেয়।
বৃক্ষরোপণের নামে প্রতিবছর বিভিন্ন সংস্থা গাছ রোপণ করে। কিন্তু গাছগুলো এই শহরের জন্য কতটা উপযোগী, তা বিবেচনা করা হয় না। ১৯৭৮ সালের আগে তৎকালীন ঢাকা পৌরসভা শহরের বিভিন্ন স্থানে গাছ লাগিয়েছিল। একইভাবে গণপূর্ত বিভাগ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের লাগানোও অনেক গাছ আছে। এসব গাছের তথ্য সিটি করপোরেশনের কাছে নেই।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিবেশ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারিক বিন ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির নামে বিভিন্ন সংস্থা সড়কের পাশে গাছ লাগাচ্ছে। কিন্তু গাছ লাগানোর আগে বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না। এই গাছ কোন সংস্থা রক্ষণাবেক্ষণ করবে, সেটি নির্ধারণ করা নেই।
এ ক্ষেত্রে যে সংস্থা লাগিয়েছে, তাদেরই গাছগুলো দেখভাল করা উচিত বলে মনে করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সংস্থাগুলো নিজেদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করলে ঝুঁকিপূর্ণ গাছে জননিরাপত্তার হুমকি, প্রাণহানির শঙ্কা থাকবে না। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয় সভায় সংস্থাগুলোকে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে অনুরোধও করা হয়।
গত চার দিনে ঝড় এবং ঝোড়ো বাতাসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৮০টি গাছ ভেঙে পড়ে। এর মধ্যে একাধিক গাছ সড়কের যানবাহনের ওপরে ভেঙে পড়ে। সড়কে গাছ পড়ে থাকায় যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। গত রোববার ধানমন্ডিতে গাছের চাপায় আহত হন অন্তত ২০ জন।
গত বছরের ১৯ মার্চ সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের পেছনে লেক রোডে পথচলতি যানবাহনের ওপর হঠাৎই ভেঙে পড়ে বড় একটি কৃষ্ণচূড়াগাছ। এতে নিহত হন মোটরসাইকেল আরোহী মুজাহিদুল ইসলাম। একই ঘটনায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার একজন চালকও আহত হন।
২০১৬ সালের ৭ মার্চ ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কের ফুটপাতের একটি বিশাল আকৃতির কৃষ্ণচূড়াগাছের চাপায় প্রাণ হারান প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ও চলচ্চিত্রনির্মাতা খালিদ মাহমুদ। শিকড় থেকে উপড়ে পড়া গাছটি তাঁকে বহন করা রিকশাকে চাপা দেয়। দুমড়ে-মুচড়ে যায় রিকশাটি। এতে মৃত্যু হয় তাঁর। রিকশাচালক প্রাণে বেঁচে যান।
সিটি করপোরেশন, ওয়াসাসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থা নানান সময় সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে অনেক সময় সড়ক ও ফুটপাতের পাশে লাগানো গাছের শিকড়ও কাটা পড়ে। আবার ফুটপাত উন্নয়নের ফলে গাছের শিকড় বিস্তৃত হতে পারে না। তাই মাটির ওপর গাছগুলো আপাতত সজীব দেখালেও ভেতরে অনেকটাই দুর্বল থাকে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, সড়কের পাশে লাগানোর জন্য নরম কাণ্ডের গাছ নির্বাচন করা উচিত নয়। অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়নকাজের সময় শক্ত কাণ্ডের গাছের শিকড়ও কাটা পড়ে দুর্বল হয়ে যায়। কোন সড়কে কোন জাতের গাছ লাগানো হবে এবং সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ কোন সংস্থা করবে-এগুলোর একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করা প্রয়োজন।