লাশ দুটি চলন্ত ট্রেনের ছাদেই ছিল

চট্টগ্রামগামী চলন্ত আন্তনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাদে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর হাত ধরাধরি করে নাচছিল দুই পথশিশু। আরেক পথশিশুকে নাচার জন্য হাত ধরে টেনে তোলার চেষ্টা করছিল তারা। কিন্তু ফেনী স্টেশনের পদচারী-সেতুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে ট্রেনের ছাদেই লুটিয়ে পড়ে ওই দুই শিশু। পরে সেখানেই তাঁদের মৃত্যু হয়।

ফেনী থেকে চট্টগ্রাম স্টেশন পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার পথে প্রায় দেড় ঘণ্টা দুটি লাশ চলন্ত ট্রেনের ছাদেই ছিল। এ ঘটনায় আহত হয়েছে মোহাম্মদ রায়হান নামে অপর এক শিশু। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে সুবর্ণ চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছালে আহত পথশিশু মোহাম্মদ রায়হান লোকজনকে ডেকে দুর্ঘটনার খবরটি দেয়। পরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার পুলিশ ট্রেনের ছাদ থেকে দুই পথশিশুর লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। তবে নিহত ওই দুই শিশুর পরিচয় পাওয়া যায়নি। আহত রায়হানকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে পুলিশ।

আজ বুধবার দুপুর নাগাদ রায়হান কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেও হাতে ব্যথা রয়ে গেছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম জিআরপি থানায় পুলিশ হেফাজতে আছে সে। রায়হান প্রথম আলোকে বলে, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটায় ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রেনের (সুবর্ণ এক্সপ্রেস) ছাদে ওঠে। তাঁর বয়স ১০ বছর। ছাদের পেছনের অংশে নিহত ওই দুই শিশুর সঙ্গে সে ছিল। ট্রেনের সামনের অংশে আরও পাঁচজন উঠেছিল। তারা অবশ্য অক্ষত আছে।

রায়হান দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলে, ‘ফেনীর কাছাকাছি আইলে ওরা নাচ্ছিল (নাচানাচি)। আমি বইয়াছিলাম (বসা)। তারা আমার হাত ধইরা টাইনা তুইলা নাচতে কইছিল। তখন আমি ব্রিজের লগে (পদচারী-সেতুর সঙ্গে) বারি খাই, হাতে ব্যথা পাই। ওরা বারি খাইয়া পইরা যায়। সেখানেই মইরা যায়।’

চট্টগ্রাম স্টেশনে ট্রেন পৌঁছালে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ওই দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে। নিহত ওই দুই পথশিশুর মধ্যে একজনের বয়স ১০ বছর এবং অপর জনের বয়স ১২ থেকে ১৩ বছর। রায়হান জানায়, সে জয়দেবপুর স্টেশনে পপ কর্ন (ভুট্টা ভাজা) বিক্রি করে তার খাবারের খরচ চালায়। তার বাবা মইনুল হক জামালপুরে কাঁচামালের (সবজি) ব্যবসা করেন। মা হালিমা জামালপুরে থাকেন। ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ তার নেশা। জয়দেবপুর-ঢাকার মধ্যে ট্রেনের ছাদে সে নিয়মিত ভ্রমণ করে আসছিল। সুবর্ণ এক্সপ্রেসে চড়ে চট্টগ্রামে জীবনে এই প্রথম সে এসেছে। নিহত ওই দুই শিশু বেশ কয়েকবার ট্রেনের ছাদে চড়ে চট্টগ্রাম এসেছিল বলেও জানায় সে।

১০ বছর বয়সী নিহত শিশুটির বাড়ি শ্রীপুর বলে রায়হান জানায়। তবে জেলার নাম সে বলতে পারেনি। আর ১২-১৩ বছর বয়সী শিশুটি সম্পর্কে সে কিছুই জানে না। জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে অজ্ঞাত দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। ফেনী স্টেশনে ফুটওভার ব্রিজে ধাক্কা খেয়ে তারা ট্রেনের ছাদেই মারা যায়। তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। লাশ দাফনের জন্য জনকল্যাণ সংস্থা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে দেওয়া হচ্ছে।

আহত রায়হান তাঁর বাবা-মায়ের নাম বলতে পারলেও তাঁদের সুনির্দিষ্ট ঠিকানা জানাতে পারেনি। তাঁকে প্রকৃত অভিভাবকের কাছে হস্তান্তরের চেষ্টা চলছে। নইলে কোনো এতিমখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।