রানা প্লাজা ধসের ঘটনার বিচারে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি: টিআইবি

পাঁচ বছরে পেরিয়ে গেলেও সাভারে রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৮ শ্রমিক নিহতের ঘটনায় বিচার না হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

‘তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন: অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ পর্যালোচনা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে আজ বৃহস্পতিবার টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা দায়ী, তাদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি দীর্ঘসূত্রতা এবং অন্যান্য কারণে। কোনা কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে বলে আমরা মনে করি।’ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে রানা প্লাজা ধসের ঘটনা বিচারের দাবি করেন তিনি।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারপারসন ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের বিচার দুই বছর ধরে স্থগিত। বলছে যে সাক্ষী পাচ্ছেন না। এটি তো কোনো গোপন হত্যাকাণ্ড না। প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার হাজার মানুষের সামনে ঘটনাটি হয়েছে। আহত শ্রমিক কিংবা নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন প্রত্যেকেই সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন। কেন ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি ধরাও গেছে।’

সুলতানা কামাল বলেন, ‘বিচার আটকে রাখা হয়েছে। কারণ যাঁরা অভিযুক্ত ও যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তাঁরা উচ্চ আদালতে গিয়ে বিচারের বিষয়টি আটকে রেখেছেন। এটিই কিন্তু একটা উদাহরণ, আমাদের বিচারব্যবস্থাকে এখনো প্রভাবিত করার মতো পরিস্থিতি রয়েছে। যেটা সামগ্রিকভাবে সুশাসনের ওপর একটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া নিয়ে আসে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই পরিস্থিতি বিরাজ করে, যাঁরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী, ক্ষমতাবান এবং যাঁদের প্রতাপ আছে, তাঁরা কোনো না কোনোভাবে বিচারব্যবস্থার ওপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেন। যদি তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে; সেটির ফলাফলই আমরা এখানে দেখতে পাচ্ছি।’

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন টিআইবির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মিনা। তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর ১০২টি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৪০টির বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে। ৪২টি চলমান রয়েছে। তবে ২০টি উদ্যোগের বাস্তবায়ন ধীর ও স্থবির হয়ে রয়েছে।

ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনে ঘুষ লেনদেন হয়—এমন তথ্য উঠে এসেছে টিআইবির প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনে শ্রম পরিদপ্তরের কোনো কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ১০-১৫ হাজার টাকার নিয়মবহির্ভূত অর্থ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।

পোশাকশ্রমিকের মজুরি নিয়ে টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোশাকশ্রমিকের বর্তমান মজুরি গ্রহণযোগ্য নয়। তাই দ্রুত মজুরি পুনর্নির্ধারণের কাজ শেষ করা দরকার। প্রতিযোগী দেশ কম্বোডিয়ার সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের নিম্নতম মজুরি ২০২ মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

সংসদে উপস্থাপিত শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির তালিকায় ২৬টি প্রতিষ্ঠান তৈরি পোশাকশিল্প খাতের। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ২৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। বিষয়টি টিআইবির প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। বিষয়টি নিয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেহেতু সংসদে তাদের নাম উত্থাপিত হয়েছে, তাই তাদের অবশ্যই ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ও জালিয়াতকারী বলা যায়। দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবেও চিহ্নিত করা যায়। অভিযোগ উত্থাপন করা যায়। কিন্তু বাস্তবে তারা কতখানি অপরাধী হয়েছে, সেটি আদালতের বিচার্য বিষয়। তবে সার্বিকভাবে পোশাকশিল্প খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও সুশাসনের যে ঘাটতি তারই প্রমাণ।