৭ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি বিভাগে এক বছর আগে শিক্ষক নিয়োগের সাক্ষাৎকার নেওয়া হলেও কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বরং সম্প্রতি ওই বিভাগগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের জন্য পুনঃ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। পুনঃ বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ সিন্ডিকেটেও অবহিত করা হয়নি বলে জানিয়েছেন সিন্ডিকেটের এক সদস্য।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিন্ডিকেটের এক সদস্য বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগের জন্য আগের উপাচার্যের সময় সাক্ষাৎকার নেওয়া হলো। কিন্তু এক বছরেও সেই নিয়োগ দেওয়া হলো না। এর মধ্যে ওই সাত বিভাগে পুনঃ বিজ্ঞপ্তি দেওয়াও বিধিসম্মত হয়নি। কেননা বিজ্ঞপ্তির এ বিষয়টি সিন্ডিকেট সভার আলোচ্যসূচিতে ছিল না।’


বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতাসহ ১৫টি বিভাগে ২৫ জন প্রভাষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।

গত বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সাবেক উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবী ১৫ বিভাগের মধ্যে ৭টি বিভাগের সাক্ষাৎকার-প্রক্রিয়া শেষ করেন। বিভাগগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করা হয়নি—এ অভিযোগ করে উচ্চ আদালতে রিট করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক তাবিউর রহমান প্রধান। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক উপাচার্য বাকি আট বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের সাক্ষাৎকার নেননি। গত বছরের ৫ মে তাঁর মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ওই বছরের ১৪ জুন নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন। তাঁর যোগদানের পর তাবিউর রহমান গত বছরের ৭ আগস্ট রিটটি প্রত্যাহার করে নেন।

চলতি বছরের ৩ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে ওই সাত বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের পুনঃ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আগে যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের নতুন করে আবেদন করার প্রয়োজন নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আবেদনকারী বলেন, ‘এটা তো হতে পারে না। আগের বিজ্ঞপ্তির পর নিয়োগের জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু সেই নিয়োগ না দিয়ে পুনঃ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলো। এটা বিধিসম্মত নয়।’

আওয়ামী লীগ-সমর্থিত শিক্ষকদের জোট নীল দলের সাধারণ সম্পাদক আপেল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, সাক্ষাৎকার হওয়া ওই সাত বিভাগের শিক্ষক নিয়োগকে পাশ কাটিয়ে নতুন উপাচার্য যোগদান করার পর রসায়ন, সমাজবিজ্ঞান, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ—এই পাঁচটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দেন।

শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি তুহিন ওয়াদুদ অভিযোগ করেন, উপাচার্য ৫৫তম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাঁচটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করলেও সাবেক উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবীর সময় সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা সাতটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ প্রায় এক বছরেও দেওয়া হলো না। বরং আগের শিক্ষক নিয়োগকে বাতিল না করে ওই সাত বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের পুনঃ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলো। এটি বিধিসম্মত নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইব্রাহীম কবীর নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, আগে যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের নতুন করে আবেদন করতে হবে না। নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বিধিসম্মত হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।