বৈশাখীর খুদে বার্তাই সত্যি হলো...

বৈশাখী ধর তৃপ্তি
বৈশাখী ধর তৃপ্তি

‘ভোর ৬টার পর এসে আমাকে আর পাবে না তোমরা, আমি সকলকে ছেড়ে চলে যাব’—এই খুদে বার্তা স্বজনদের মুঠোফোনে পাঠিয়েছিলেন বৈশাখী ধর তৃপ্তি (২৭)। তাঁর কথাই সত্য হলো। সেই ভোরের পর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর তিনি লাশ হয়ে সুরমা নদীর জলে ভাসছিলেন। একসময় পরিচয়হীন এই লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবার যখন তাঁর খোঁজ পায়, তখন তিনি কবরে সমাহিত। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কবর থেকে তোলা হয় সেই লাশ।

বৈশাখী ধর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি নিয়েছিলেন সিলেট রেলওয়েতে। রেলওয়ের ডাক বিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন। বিয়ে হয়েছিল ১০ মাস আগে। গত শনিবার গভীর রাতে বৈশাখী স্বামীর ঘর থেকে ওই খুদে বার্তা পাঠিয়েছিলে বড় বোন ও বোনের স্বামীর কাছে। এরপর ভোর থেকে বৈশাখী নিখোঁজ ছিলেন।

বৈশাখীর স্বামী রিংকু চন্দ্র ধরের সঙ্গে তিনি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকার ভার্তখলার বাসায় থাকতেন। রিংকু সিলেট পল্লী উন্নয়ন ও দারিদ্র্যবিমোচন ফাউন্ডেশনের সদর কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক।

বৈশাখী সিলেট সদরের বহরদাস পাড়ার পরিতোষ ধরের মেয়ে। ২১ এপ্রিল শনিবার গভীর রাতে খুদে বার্তা পাওয়ার পর বৈশাখীর বোন সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করে রিংকুর সঙ্গে। রিংকু তখন জানান, বৈশাখীর সঙ্গে তাঁর সামান্য ঝগড়া হয়েছিল, সেটি মিটমাট হয়ে গেছে।

বুধবার দুপুরে বৈশাখী ধরের লাশ পাওয়া যায় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের পাশে সুরমা নদীতে। সুরমা নদী সিলেট থেকে সুনামগঞ্জে এসেছে। বৈশাখীর লাশ সুরমার জলে ভাসতে ভাসতে এসে লাগে দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের খাদ্যগুদামের ঘাটে। দোয়ারাবাজার থানা-পুলিশ লাশটি উদ্ধার করলেও পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি। পরে বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি বুধবার বিকেলে দাফন করা হয় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের মরাটিলা কবরস্থানে।

বৃহস্পতিবার পরিবারের লোকজন সুনামগঞ্জে একটি লাশ উদ্ধারের খবর পান। বয়স, পরনের পোশাক, শারীরিক গঠনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তারা সুনামগঞ্জে আসেন। সুনামগঞ্জে এসে নিশ্চিত হন লাশটি বৈশাখীর। এরপর কবর থেকে লাশ তোলার আবেদন করলে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লাশ তোলার অনুমতি দেন। সন্ধ্যায় বৈশাখীর লাশ নিয়ে পরিবারের লোকজন সিলেটে ফেরেন।

বৈশাখী ধরের ফুফাত ভাই রাশিন্দ্র চন্দ্র দে জানান, রিংকু ও বৈশাখী যে বাসায় থাকতেন সেটির ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার (সিসি) ফুটেজে দেখা গেছে, বৈশাখী ২২ এপ্রিল ভোট ৫টা ৪৯ মিনিটে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এরপর তাঁর কোনো খোঁজ মিলছিল না।

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, পরিতোষ ধরের সঙ্গে কথা বলে এবং মেয়েটির ছবি দেখে নিশ্চিত হওয়ার পরই লাশ কবর থেকে তোলার অনুমতি দেওয়া হয়।

বুধবার রাতেই বৈশাখীর বাবা রিংকু ধরের বিরুদ্ধে দক্ষিণ সুরমা থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা করেন। পুলিশ রাতেই রিংকুকে গ্রেপ্তার করেছে।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ফজল মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। মামলায় রিংকুর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগও করা হয়েছে বলে জানান তিনি।