ভারতের পক্ষে কথার বলার অধিকার তো কাদেরকে কেউ দেয়নি: ফখরুল

ওবায়দুল কাদের ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ওবায়দুল কাদের ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রশ্ন, ভারতের পক্ষ নিয়ে কথা বলার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে কে দিয়েছেন। তাঁকে (ওবায়দুল কাদের) কী ভারত দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা সৃষ্টি করেছেন ওবায়দুল কাদের। কারণ ভারতের পক্ষে কথার বলার অধিকার তো তাকে কেউ দেয়নি। তিনি যে কথা বলেছেন, যা গোটা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অনেক প্রশ্নের উদ্বেগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সম্মিলিত বৌদ্ধ নাগরিক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল ২২ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল ভারত সফর করে। এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ফিরে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।

ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একটা বড় দল গিয়েছিল আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারতে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে মতবিনিময় করার জন্য। খুব ভালো কথা। আমরা এ ধরনের সফরকে এনকারেজ করি। এতে দুই দেশের মানুষের মধ্যে, রাজনৈতিক দলের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। তিনি বলেন, সফর শেষে এসে কী বলছেন? এসে বললেন, ভারত বলেছে যে বাংলাদেশের নির্বাচনে তারা ইন্টারফেয়ার করবে না। কথাটার অর্থ কী? কেউ কী বলেছে যে ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবে? তাঁকে (ওবায়দুল কাদের) কী ভারত দায়িত্ব দিয়েছে এ কথাটা বলার। এই দায়িত্ব তিনি কার কাছ থেকে পেলেন যে ভারতের পক্ষ নিয়ে বলছেন ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনে ইন্টারফেয়ার করবে না। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটা আপনার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা সৃষ্টি করলেন তিনি। কারণ ভারতের পক্ষে কথা বলার অধিকার তো তাঁকে কেউ দেয়নি। তিনি যে কথা বলেছেন, যা গোটা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অনেক প্রশ্ন ও উদ্বেগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।’

প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সব সময় মনে করি যে ভারত আমাদের সবচেয়ে নিকট বন্ধুরাষ্ট্র। কারণ মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকার আমরা স্বীকার শুধু নয়, শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি এবং আমরা মনে করি যে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয়। তাদের সম্পর্কে কোনো ভুল ধারণা সৃষ্টি হোক, সেটা আমরা চাই না। আমরা সব সময় প্রত্যাশা করি, পৃথিবী সব গণতান্ত্রিক দেশ যেন গণতন্ত্রের পক্ষে থাকে, তারা যেন মানুষের অধিকারের পক্ষে থাকে, তারা যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে থাকে। যখন কোনো রাষ্ট্রে গণতন্ত্রকে, মানুষকে দমন–পীড়ন করা হয়, যখন প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়, তখন যেন তারা সোচ্চার থাকে, জনগণের পক্ষে থাকে—সেটাই হচ্ছে ভালো সম্পর্ক।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যত দিন জীবিত ও কর্মক্ষম আছেন, তত দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে, দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই।

গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে কাজী বশির মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, বাংলাদেশের কোনো অপশক্তির ক্ষমতা নেই জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করার। শেখ হাসিনা যত দিন জীবিত ও কর্মক্ষম আছেন, তত দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজীবন ক্ষমতায় থাকুক আওয়ামী লীগ, আমরা খুব খুশি হব। তবে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসেন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় আসেন। আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সরকারকে সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, দেশনেত্রীকে কারাগারে রেখে নির্বাচনের চিন্তা করবেন না, সেটা হবে না। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য সকল রাজনৈতিক দলগুলো প্রতি আবারও আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব’।

সম্মিলিত বৌদ্ধ নাগরিক নামের এই সংগঠনের সভাপতি দিলীপ কুমার বড়ুয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আহ্বায়ক গৌতম চক্রবর্তী, বিএনপির ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক দীপেন দেওয়ান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আক্তার হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।