কাজ শেষ না হলে বড় ভোগান্তির আশঙ্কা

>

ভারী বৃষ্টি হলেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গত বছর বর্ষায় িনয়মিতভাবে জলাবদ্ধতার শিকার ১৫টি এলাকা চিহ্নিত করেছে প্রথম আলো। এই বর্ষায় ওই এলাকাগুলোকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে বাঁচাতে সিটি করপোরেশন কী উদ্যোগ নিয়েছে, তা কতটুকু কার্যকর হবে, নাকি এবারও ডুববে সেসব এলাকা এবং ভুগতে হবে নগরবাসীকে? তার খোঁজখবর নিয়েই এই আয়োজন।

বর্ষা আসতে বেশি দেরি নেই। অথচ এখনো শেষ হয়নি সংস্কারকাজ। মঙ্গলবার পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড।  প্রথম আলো
বর্ষা আসতে বেশি দেরি নেই। অথচ এখনো শেষ হয়নি সংস্কারকাজ। মঙ্গলবার পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড। প্রথম আলো

পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের বাসিন্দারা জানান, কয়েক বছর আগেও এই এলাকায় ভারী বৃষ্টি হলে রাস্তা ডুবে যেত। তখন সড়ক হয়ে যেত নদী। চলাচলের জন্য ভাসাতে হতো নৌকা। তবে গত দু-এক বছরে নৌকা ভাসার মতো অবস্থা না হলেও হাঁটুপানির কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সারা দিন।

তবে এবারের বর্ষায় যেন জলাবদ্ধতা আরও কমানো যায়, তার জন্য কাজ চলছে। অবশ্য এলাকাবাসী বলছেন, সংস্কারের জন্য প্রধান রাস্তা খুঁড়ে মাটি যেভাবে স্তূপ করে রাখা হয়েছে, তাতে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হলে হাঁটাও যাবে না, নৌকাও চলবে না।

সংস্কারকাজের দায়িত্বে থাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল–৩ বলছে, পানি চলাচলের জন্য ড্রেনে পাইপ বসানোর কাজ শেষের পথে। কাজ শেষ হলে কোনো ভোগান্তিই হবে না। অঞ্চল–৩–এর নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল বাকের বলেন, এই এলাকার পানি চলাচলের লাইনগুলো অনেক পুরোনো। এ বছর কাজ চললেও বিভিন্ন করণে তা বিলম্বিত হয়েছে। যেটুকু কাজ বাকি আছে, তা বর্ষা মৌসুম আসার আগেই শেষ হয়ে যাবে।

তবে সংস্কারকাজে যুক্ত কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই রোডগুলোতে এখন পাইপ বসানোর কাজ চলছে। এরপর সেগুলো ভরাট করতে হবে। পিট ও স্ল্যাব বসানো হবে। এরপর রাস্তা ও ফুটপাত মেরামত শেষে করা হবে কার্পেটিংয়ের কাজ। যে গতিতে কাজ চলছে তাতে কাজ শেষ হতে জুলাই মাস লাগবে।

গত কয়েক বছরের বৃষ্টিপাতের রেকর্ড বলছে, ভারী বৃষ্টিপাত হয় মূলত জুন ও জুলাই মাসে। তখন জলাবদ্ধতার শিকার হয় রাজধানীর অনেক এলাকা।

 পুরান ঢাকার জলাবদ্ধতা হ্রাসে এ বছর নাজিমুদ্দিন রোডের পাশাপাশি ড্রেনেজ সংস্কারকাজ করা হচ্ছে উমেশ দত্ত রোডেও। সিটি করপোরেশনের ওই অঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নাজিমুদ্দিন রোডে ১ হাজার ২৮০ মিটার আর উমেশ দত্ত রোডে ৭৯০ মিটার নিষ্কাশন লাইনের সংস্কারকাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে নাজিমুদ্দিন রোডে ৩০০ ও উমেশ দত্ত রোডে ৭০-৮০ মিটার সংস্কারকাজ বাকি আছে। দুটি ভাগে এই দুই রোডের পানি বুড়িগঙ্গা নদীতে নেওয়া হবে। নাজিমুদ্দিন রোডের পানি জেলখানার মোড় হয়ে সরাসরি যাবে সোয়ারীঘাটে। সেখান থেকে বুড়িগঙ্গা। উমেশ দত্ত রোডের পানি অরফানেজ রোডে গিয়ে মিলিত হবে ওয়াসার নালায়। সেখান থেকে পানি সোয়ারীঘাট হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে পড়বে।

এই দুই রোডের নিষ্কাশন লাইন সংস্কারকাজের বরাদ্দের বিষয়ে আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও ডিএসসিসির একটি সূত্রে জানা যায়, ডিএসসিসির মেগা প্রকল্পের আওতায় শুধু উমেশ দত্ত রোডের সংস্কারকাজে বরাদ্দ আছে ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা।

৫ জুলাই ২০১৭ : বৃষ্টিতে ডুবে গিয়েছিল পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড।  ফাইল ছবি
৫ জুলাই ২০১৭ : বৃষ্টিতে ডুবে গিয়েছিল পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড। ফাইল ছবি

সরেজমিনে এই দুই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নাজিমুদ্দিন রোডে সংস্কারকাজ হচ্ছে জেলখানা মোড় থেকে হাসিনা মঞ্জিল পর্যন্ত। এক পাশে পাইপ বসানোর জন্য বিভিন্ন স্থানে খুঁড়ে রাখা হয়েছে। তার পাশে প্রায় বুকসমান উঁচু করে মাটি স্তূপ করে রাখা হয়েছে রাস্তার ওপর। খোঁড়া অংশে পাইপ বসানোর কাজ করছেন শ্রমিকেরা। রাস্তা সরু হওয়ায় চলাচলে একটু পরপর সৃষ্টি হচ্ছে জনজট ও যানজট।

এমন দৃশ্য দেখিয়ে নাজিমুদ্দিন রোডের জেলখানার মোড়ে দাঁড়িয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলছিলেন, এই এলাকায় চলাচলের জন্য এটিই প্রধান পথ। গত বছর পানি জমলেও রাস্তা সমান ছিল। চলাচলে সমস্যা হয়নি। কিন্তু এবার মাটি খুঁড়ে গর্ত আর পাইপ যেভাবে স্তূপ করে রাখছে, তাতে বর্ষার আগে কাজ শেষ করতে না পারলে কপালে দুঃখ আছে।

অপর এক বাসিন্দা বলেন, ‘কাজ করতে দেখতেছি দু–তিন মাস ধরে। এটা তো এক বছরের সমস্যা না। এবার যেহেতু সংস্কার করবেই, তাহলে বর্ষা শুরুর আগে আগে কেন করল না?’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘এটি আসলে সান্ত্বনা দেওয়ার কাজ। রোডের চাঁনখারপুল অংশটা নিচু এলাকা। পাইপ বসাতে ওই দিকটা উঁচু করার দরকার ছিল। তা না করে ইচ্ছেমতো পাইপ বসাচ্ছে।

আসলাম মিয়া নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, পাইপের ওপর ভিটা বালু দিয়ে ভরাট করার কথা। কিন্তু এগুলো ভরাট করা হচ্ছে ময়লা দিয়ে। এর ওপর কার্পেটিং করলে ট্রাক চলাচলে রাস্তা ভাঙবে, আবার গর্ত তৈরি হয়ে পানি জমে থাকবে।

আবুল হোসেন নামের এক বাসিন্দা বলেন, গত বছর নাজিমুদ্দিন রোডে সবচেয়ে বেশি পানি জমে ছিল বড় মসজিদ এলাকায়। কিন্তু ওখানে কাজই হচ্ছে না।

উমেশ দত্ত রোডে সংস্কারকাজ চলছে বকশীবাজার মোড় থেকে কারা সদর দপ্তর পর্যন্ত। এক্সকাভেটর মেশিন দিয়ে মাটি খোঁড়ার কাজ চলছে বকশীবাজার মোড় অংশে। রাস্তার এক পাশে মাটি খুঁড়ে সেটি রাখা হয়েছে রাস্তার মাঝখানে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে এই সড়কের যান চলাচল। কারা সদর দপ্তর থেকে নবকুমার ইনস্টিটিউশনের সামনে পর্যন্ত পাইপ বসানোর কাজ শেষ হলেও চলছিল মাটি ভরাটের কাজ।

এই কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে শ্রমিক সরবরাহ করছেন সুমন সরকার। অগ্রগামী শিশু নিকেতন স্কুলের সামনে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, মাটি ভরাটের পর এর ওপর আবার বালু ফেলা হবে। তার ওপর খোয়া ফেলে আবার বালু ফেলে দুবার ঢালাই করতে হবে।

কবে কাজ শেষ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে তো বৃষ্টি হয়, তখন কাজ থেমে থাকে। এভাবে চললে রোজার ঈদ নাগাদ সময় তো লাগবেই।