পোষ মানলে আর উড়ে যায় না

নির্বিঘ্নে বিচরণ করছে দুটি কালিম পাখি। বৃহস্পতিবার  সিলেটের এমসি কলেজে।  আনিস মাহমুদ
নির্বিঘ্নে বিচরণ করছে দুটি কালিম পাখি। বৃহস্পতিবার সিলেটের এমসি কলেজে। আনিস মাহমুদ

জলাভূমির পাখি কালিম। জল-ডাঙায় বিচরণের জন্য দুঃসাহসী, লড়াকু ও মারকুটে স্বভাবের। এ পাখির আরও এক বৈশিষ্ট্য আছে। পোষ মানলে আর উড়ে যায় না। এমনটি দেখা গেল সিলেটের এমসি কলেজের স্টাফ কোয়ার্টারে। এক জোড়া কালিম পাখি গৃহপালিত হাঁস-মুরগির সঙ্গে বিচরণ করছে।

পোষ মেনেছে, তাই তিন বছর ধরে গৃহপালিত হয়ে আছে দুটো কালিম। সিলেটের এমসি কলেজ ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝোপঝাড় কালিম দুটোর বিচরণস্থল। দিনমান বিচরণ করে ফিরে আসে এমসি কলেজের স্টাফ কোয়ার্টারে। প্রতিপালন করছেন এমসি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তৌফিক ইয়াজদানি চৌধুরী।

গত বৃহস্পতিবার পোষা কালিম দুটোর নির্বিঘ্ন বিচরণ দেখে কথা হয় তৌফিকের সঙ্গে। জানালেন, তিন বছর হয় তিনি শখের বশে কালিম পাখি প্রতিপালন করছেন। ময়মনসিংহের ফুলপুর থেকে দুই জোড়া কালিম কিনেছিলেন। এর মধ্যে পোষার সময় একটি মারা যায়। একটি উড়ে যায়। পোষ মেনেছে দুটো। এগুলো এখন তাঁর ঘরের সদস্য হয়ে গেছে। সকালে বের হয়, নিজ থেকে খাদ্য আহরণ শেষে সন্ধ্যায় ফিরে আসে নীড়ে; মানে তৌফিক ইয়াজদানির ঘরে।

বিষয়টি নিয়ে এই প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন বাংলাদেশের পাখিবিশেষজ্ঞ শরীফ খানের সঙ্গে। তিনিও জানালেন, পোষ মানলে কালিম পাখি আর উড়ে যায় না। শরীফ খান বলেন, কালিমের ইংরেজি নাম purple swamphen. বৈজ্ঞানিক নাম porphyrio porphyrio. দৈর্ঘ্য ৪৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৬৫০ গ্রাম। মারকুটে এই পাখিরা একনজরে চকচকে নীলচে বেগুনি। কপাল-মাথাজোড়া আলতা রঙে দর্শনীয়। লালচে রঙের পা ও পায়ের লম্বাটে আঙুল। লেজের তলা কার্পাস তুলোর মতো সাদা। চোখের পাশে বৃত্তাকারে সাদাটে ছোপ। নাদুসনুদুস স্বাস্থ্যবান এই পাখিরা সব সময় যেমন সতর্ক থাকে, তেমনি যেন রেগেও থাকে। শিকারিদের বন্দুকের গুলি যদি পায়ে লাগে, তবু কাবু হয় না। পা মুখে কামড়ে ধরে উড়ে পালায়। এদের মূল খাদ্য জলজ উদ্ভিদ-গুল্মের কচি নরম পাতা-ডগাসহ পদ্মফুলের ভেতরের অংশ, ব্যাঙের বাচ্চা, ছোট মাছ।

দুটো কালিম পাখির প্রায় তিন বছর ধরে পোষ মেনে বিচরণ করার বিষয়টি জানালে শরীফ খান প্রথম আলোকে বলেন, এ পাখির স্বভাব এমনই। জলে-জঙ্গলে থাকলে এদের খুবই দুঃসাহসিক দেখা যায়। খাওয়া আর নিজেকে রক্ষায় লড়াকু প্রকৃতির হয়।

আবাসস্থল বিপর্যয়ের কারণে বাংলাদেশে কালিম পাখির সংখ্যা কমছে জানিয়ে শরীফ খান বলেন, একসময় বিল-হাওরে প্রচুর দেখা মিলত কালিম পাখির। এখন এরা কোণঠাসা অবস্থায় আছে হাওরাঞ্চলে। হাকালুকির হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওরে এদের দেখা মেলে। ‘জোড়’ না মিললে (ভালো সঙ্গী না পেলে) এরা ডিম পাড়ে না। গ্রীষ্ম-শরতে ভাসমান জলজ উদ্ভিদ-গুল্ম-কচুরিপানা ও ঝোপঝাড়ের তলায় ডাল-লতা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। একেকটি কালিম তিন থেকে সাতটি ডিম পাড়ে। ছানা ফোটে ১৮ থেকে ২৩ দিনে। ছানাদের বড় করতে মা-বাবা পাখির যৌথ চেষ্টা থাকে। ছানারা মা-বাবার পিঠে চড়ে। তেমনি মায়ের দুই পাখা ও বুকের তলায় বসে অদৃশ্য হয়ে থাকে।

কালিম দুটোর প্রতিপালক তৌফিক ইয়াজদানি চৌধুরী জানালেন, তাঁর পোষা দুটো কালিমই পুরুষ। তিনি ‌‘জোড়’ মেলাতে আরও দুটো কালিম কেনার চেষ্টায় আছেন। এ জন্য গাজীপুর ও ময়মনসিংহ এলাকায় কালিম পাখির খামারে যোগাযোগ করছেন।