সব চেনার মাঝে এ কেমন অচিনপুর!

এমন ২৫টি কক্ষের মালিক তিনি। ইনসেটে শুক্কুর আলী। কেওয়া পূর্বখণ্ড, শ্রীপুর, গাজীপুর, ৬ মে। ছবি: সাদিক মৃধা
এমন ২৫টি কক্ষের মালিক তিনি। ইনসেটে শুক্কুর আলী। কেওয়া পূর্বখণ্ড, শ্রীপুর, গাজীপুর, ৬ মে। ছবি: সাদিক মৃধা


ছোট্ট খুপরি ঘরে তাঁর বসতি। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। বিছানা ভিজে যায়। রাতে আলো বলতে কেবল বাইরে জ্বালানো বাতির হালকা রশ্মি।

শুক্কুর আলীর (৭০) বাড়ি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্বখণ্ড এলাকায়। বর্তমানে ফাটা মাথা নিয়ে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। অভিযোগ, পুত্রবধূ তাঁর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন। তিনি ওই এলাকার মুদি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের (৪২) বাবা।

গতকাল রোববার শুক্কুর আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তিনি মাথায় ৬টি সেলাই নিয়ে বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন। পুরো বাড়িতে ২৫টি সুসজ্জিত কক্ষ। সব কক্ষ ভাড়া দিয়েছেন ছেলে। বাবাকে রেখেছেন ঘরের পাশে টিনের চাল দিয়ে কোনো রকমের তৈরি একটি ছাপরার নিচে। সেখানে ইট বিছানো মেঝেতে ময়লাযুক্ত একটি তোশক পাতা। কোনো জানালা নেই। নেই দরজার কপাটও। একটু বৃষ্টি এলেই পানিতে বিছানাসমেত কক্ষ ভিজে যায়। এর মাঝেই চলছে তাঁর জীবন। শুক্কুর আলীর দাবি, পুরো বাড়ির মালিক তিনি নিজেই। আনোয়ার হোসেন ছাড়া শুক্কুর আলীর রয়েছেন দুই মেয়ে। তাঁরা শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। শুক্কুর আলীর স্ত্রীও থাকেন এক মেয়ের সঙ্গে। স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্কুর আলী যে কক্ষে থাকছেন, তা মূলত মুরগির জন্য বানানো হয়েছিল।

আহত শুক্কুর আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘একমাত্র ছেলে কৌশলে আমার সব জমিজমা লিখে নিয়েছে। তার দুই বোনকে কোনো জমিজমা দেয়নি। ছেলে ব্যবসা করে। সেখানে গিয়ে ওষুধ চাইলে মানুষের সামনে আমাকে অপমান করে। ঠিকমতো খাবার দেয় না। আমি একটা ছোট ঘরে থাকি। তারা থাকে বড় ঘরে। তাদের ঘরে পানি পড়ে না, কিন্তু আমার ঘরে পানি পড়ে।’

দরজার কপাট ও জানালা ছাড়া এই কক্ষের ময়লা মেঝেতে থাকতে হচ্ছে শুক্কুর আলীকে। কেওয়া পূর্বখণ্ড, শ্রীপুর, গাজীপুর, ৬ মে। ছবি: সাদিক মৃধা
দরজার কপাট ও জানালা ছাড়া এই কক্ষের ময়লা মেঝেতে থাকতে হচ্ছে শুক্কুর আলীকে। কেওয়া পূর্বখণ্ড, শ্রীপুর, গাজীপুর, ৬ মে। ছবি: সাদিক মৃধা


শুক্কুর আলী অভিযোগ করেন, গত শনিবার খাবার নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ছেলের স্ত্রী শামছুন্নাহার তাঁকে বেধড়ক মারপিট করেন। একপর্যায়ে লাঠির আঘাতে শুক্কুর আলীর মাথা ফেটে যায়। স্থানীয়রা পার্শ্ববর্তী কেওয়া বাজারের একটি ওষুধের দোকান থেকে তাঁর মাথা সেলাই করে আনে।

কেওয়া এলাকার কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্কুর আলী শনিবার মাথায় আঘাত পাওয়ার পর থেকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে পুত্রবধূ। ছেলে আনোয়ারও গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। তাঁর দোকানও শনিবার থেকে বন্ধ আছে।

এদিকে গণমাধ্যমকর্মীদের থেকে খবর পেয়ে পুলিশ শুক্কুর আলীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। রোববার বিকেল থেকে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন।

শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মহসিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে বৃদ্ধকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছি। বাড়িতে ছেলে ও ছেলের স্ত্রীকে পাওয়া যায়নি। তাঁদের আটকের চেষ্টা চলছে।’

ছেলে ও তাঁর বউ পলাতক থাকায় তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।