আ.লীগ বিভক্ত, বিএনপি নীরব

একাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে তেমন দৌড়ঝাঁপ নেই। বলা হচ্ছে, হামলা-মামলার কারণে তাঁদের এই নীরবতা। এদিকে স্বস্তিতে নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। এর কারণ দলীয় কোন্দল ও বিভক্তি।

এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ১০ হাজার ২৪৫ জন। ১৯৯১ সালে সাংসদ নির্বাচিত হন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। ’৯৬ ও ২০০১ সালে জয় পান বিএনপির শাহ মো. আবুল হোসাইন। আর ২০০৮ সালে সাংসদ হন উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ।

আওয়ামী লীগেরই বিভিন্ন সূত্র বলছে, বর্তমান সাংসদ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাবেক সাংসদ ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মইদুল ইসলামের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পংকজ দেবনাথ দলীয় মনোনয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হওয়ার পরই মূলত বিরোধের শুরু। তাঁদের বিরোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে গত বছরের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে। মেহেন্দিগঞ্জ ও হিজলা উপজেলার অন্তত সাতটি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অনুগত ব্যক্তিদের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করান পংকজ দেবনাথ। তাঁর কারণে পাঁচটি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিজয়ী হন বলে অভিযোগ ওঠে। একটিতে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হন।

গত বছরের ২৩ মে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চানপুর ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মাহে আলম ঢালী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী হন পংকজের অনুসারী বাহাউদ্দিন। তিনি জয়ীও হন। কেন্দ্র দখল ও এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ করে দলীয় প্রার্থী মাহে আলম নির্বাচন বর্জন করেন। ওই দিনই বরিশাল শহরে সংবাদ সম্মেলন করে পংকজ দেবনাথের বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীদের দিয়ে এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠন করে জমি দখল, সরকারি অর্থ লুট এবং ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করানোর অভিযোগ করা হয়। পরে পংকজ দেবনাথ সংবাদ সম্মেলন করে উল্টো মইদুলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন।

দলের আরেকজন নেতা বলেন, ২০০৩ সালে মইদুল জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০০৮ সালে তিনি বিএনপির প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। অন্য দল থেকে এসে নির্বাচন করায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মানতে পারেননি।

তবে পংকজ দেবনাথ বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নয়, আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সবাই ঐক্যবদ্ধ আছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সুপ্ত প্রতিযোগিতা আছে। কেউ কেউ হীনম্মন্যতার কারণে নানা মন্তব্য করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারেন।

মইদুল ইসলাম বলেন, দলীয় সভানেত্রী চাইলে তিনি সংসদ নির্বাচন করবেন। দলের কোন্দল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দলের ওপর মহল থেকে আমাকে চুপ থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাই আর মেহেন্দিগঞ্জ যাইনি।’

বিএনপি নীরব

বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে তেমন তৎপরতা নেই। দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, চেয়ারপারসন কারাগারে। ঘরোয়াভাবেও কোনো কর্মসূচি পালনের সুযোগ নেই। এ অবস্থায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ার কথা ভাবা অবান্তর।

হিজলা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আলম বলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক গণসংযোগ তো দূরের কথা, বিভিন্ন জাতীয় দিবস পর্যন্ত পালন করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি হবে কীভাবে?

তবে দলীয় সূত্র জানায়, এ আসনে আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে সাবেক সাংসদ মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান, সাবেক সাংসদ মোশারফ হোসেনের নাম আলোচনায় আছে। সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী শাহ মো. আবুল হোসাইন এ আসনের সাবেক সাংসদ থাকলেও তিনি দীর্ঘদিন এলাকায় আসেন না। তেমন যোগাযোগও নেই। আবুল হোসাইনের মন্তব্য জানতে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। রাজিব আহসান বর্তমানে কারাগারে। তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা বলেন, তিনি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান।

বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ বলেন, বর্তমানে হিজলা মেহেন্দিগঞ্জে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। বিএনপি সংগঠিত থাকলেও মাঠে নামতে পারছে না।