গুলশানে জলনির্ভর নিসর্গ

গুলশানে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কের নতুন নকশা। এটা লেডিস ক্লাব পার্ক নামেও পরিচিত।
গুলশানে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কের নতুন নকশা। এটা লেডিস ক্লাব পার্ক নামেও পরিচিত।

পার্কজুড়ে নানা প্রজাতির ফলবান বৃক্ষের সমাহার। ফুলে ফুলে ভরা সোনালু, জারুল আর কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে হরেক পাখির কলতান। এখানে-ওখানে জুঁই, শেফালি আর কেতকীর ঝোপ। ঠিক মাঝখানে জল টলটলে পুকুরে গাছ আর আকাশের ছায়া মিলে তৈরি হয়েছে এক অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্যের।

গুলশান-২ নম্বর এলাকায় সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নামে ছায়াঘেরা এই পার্কটিকে আরও আধুনিক ও সব শ্রেণির মানুষের ব্যবহারের উপযোগী করে গড়ে তুলতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। পার্কটির নতুন নকশা প্রণয়নকারী সংস্থা ভিত্তি স্থপতি বৃন্দের পরিচালক ইকবাল হাবিব বলেছেন, এই পার্কের নকশার কেন্দ্রে আছে দুই একরের পুকুরটি। পুকুরটিকে ঘিরেই পার্কটিকে একটি জলনির্ভর নিসর্গ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে সব গাছপালা অক্ষত রেখেই।

গতকাল মঙ্গলবার এই আধুনিকায়ন কাজের উদ্বোধন উপলক্ষে পার্কে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ডিএনসিসি। অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত নকশায় দেখা যায়, পুকুরটির পাশ ঘেঁষে একটি ঝুলন্ত কাঠের হাঁটাপথ আছে। এ ছাড়া চারপাশে সাধারণ হাঁটাপথ, আলাদা সাইকেল লেন, একটা বাস্কেটবল গ্রাউন্ড আছে। নারীদের জন্য বিশেষ স্থাপনা, ব্যায়ামাগার, নামাজের স্থান, খাবারের দোকান, একটা উন্মুক্ত মঞ্চ ও পাঠাগারের সংস্থানও আছে এখানে। পুকুরের ওপর ঝুলন্ত একটি ডেক রয়েছে ‘গোস্বা ডেক’ নামে। সেই সঙ্গে নকশায় পুকুরের দুটি ঘাটের নামকরণ করা হয়েছে সঞ্চয়িতা ও গীতাঞ্জলি নামে।

ইকবাল হাবিব বলেন, প্রায় সাড়ে ৯ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এই পার্কে নানা প্রজাতির বিপুলসংখ্যক গাছ রয়েছে। এগুলো বাঁচিয়েই পার্কটি পরিমার্জন কিংবা পরিশীলনের কাজটি করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এই পার্কটি হয়ে উঠবে জল ও প্রকৃতির এক মেলবন্ধন। সেই সঙ্গে নারীবান্ধবও বটে।

সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কটির আধুনিকায়নের কাজ করা হচ্ছে ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উন্মুক্ত স্থানসমূহের আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন’ প্রকল্পের আওতায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই প্রকল্পের আওতায় ডিএনসিসির মোট ২২টি পার্ক ও ৪টি খেলার মাঠের উন্নয়ন করা হবে। এর মধ্যে চারটি পার্কের কাজ শুরু হয়েছে। বাকি ১৮টির নকশা তৈরির কাজ চলছে।

গতকালের অনুষ্ঠানে বক্তারা নগরের খেলার মাঠ, পার্ক ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্থানীয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ এলাকার জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করার তাগিদ দেন। তাঁরা বলেন, এই সম্পৃক্ততার ভেতর দিয়েই এসব স্থাপনার প্রতি সাধারণ মানুষের অভিভাবকত্ব প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্যানেল মেয়র ওসমান গণি বলেন, স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়া এসব স্থাপনার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা কঠিন।

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলাম বলেন, পার্কের নকশা তৈরির ক্ষেত্রেও স্থানীয় লোকজনের মতামত নেওয়া হয়েছে। তাঁরা যেভাবে পার্কটিকে দেখতে চান, তার প্রতিফলন নকশায় প্রতিফলিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ডিএনসিসির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মফিজুর রহমান।

একই দিনে বনানীতে উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন পার্ক নামের আরেকটি পার্কের উন্নয়নকাজ উদ্বোধন করা হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বনানী বি ব্লকের ১৮ নম্বর সড়কে অবস্থিত এই পার্কটির নকশা করা হয়েছে নারী ও শিশুদের বিষয়টি মাথায় রেখে।