মে মাসে এত বৃষ্টি কেন?

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মে মাসে এ কেমন আচরণ প্রকৃতির! মেঘহীন আকাশে নেই টগবগে সূর্য। তপ্ত রোদে পুড়বে চরাচর, কিন্তু সব হিসাব উল্টে গেছে। আকাশ থাকছে কালো মেঘে ঢাকা। রোদের তেজ তো দূরে থাক, সূর্যেরই দেখা মেলে না। সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা, রাত, এমনকি মধ্যরাতে বয়ে যাচ্ছে কালবৈশাখী। এর সঙ্গে আছে ভারী বৃষ্টি। রোজা শুরুর পর থেকে কয়েক দিন ধরে বৃষ্টির দাপট আরও বেড়ে গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য, এ বছরের মে মাসের প্রথম ২০ দিনে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃষ্টির যে ধারায় এবার গ্রীষ্মকাল চলছে, এতে সামনের দিনগুলোয় দাবদাহ বয়ে যাওয়ার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। তা ছাড়া কয়েক দিন পর মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশ উপকূলে চলে আসবে। তখন বৃষ্টির প্রবণতা আরও বেড়ে যাবে। এর লক্ষণটা এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে।

কয়েকজন আবহাওয়াবিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর পশ্চিম দিক থেকে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত জলীয় বাষ্পের জোগান অন্যান্য বছরের তুলনায় কম ছিল। এর সঙ্গে ঊর্ধ্ব স্তরেও জলীয় বাষ্পের আধিক্য কম ছিল। কিন্তু মধ্যাঞ্চলের পূর্ব দিকে আবার জলীয় বাষ্পের পরিসর বেশি থাকছে। তাই বায়ুর আর্দ্রতার তারতম্যের রেখার পর মেঘমালা প্রচুর পরিমাণে তৈরি হচ্ছে। এ কারণে দেশের উত্তর থেকে পূর্বাঞ্চলে কালবৈশাখীর সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি বেশি হতে দেখা গেছে।

কাগজ-কলমেও বৃষ্টি বেশির হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, গত শনিবার সকাল ছয়টা থেকে গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৫৭ মিলিমিটার। এ ছাড়া চাঁদপুরে ৫২ মিলিমিটার ও ঢাকায় ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি আরও বেড়ে গেছে। গতকাল রোববার সকাল ছয়টা থেকে আজ সোমবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত বেশি বৃষ্টি হয়েছে টাঙ্গাইলে—১০৭ মিলিমিটার।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, গত ৩০ বছরের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছর মে মাসে সাধারণত স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়ে থাকে। সেই হিসাবে ২০ মে পর্যন্ত বাংলাদেশে বৃষ্টি হওয়ার কথা ৭ হাজার ২১০ মিলিমিটার। কিন্তু এ সময় বৃষ্টি হয়েছে ৮ হাজার ৪১১ মিলিমিটার। এটি স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বেশি। তাই এখন প্রকৃতি অস্বাভাবিক আচরণ করছে। মনে হচ্ছে, বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবেই এ অবস্থা চলছে।

পূর্বাভাস: আজ সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম, ও বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া এবং বিদ্যুৎ চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ ও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। আগামী তিন দিন এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।