তিন পরিবারের লড়াই

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ তিনটি পরিবারের হাতে। এক পরিবারের ছেলে ভূমি প্রতিমন্ত্রী, অন্য পরিবারের মেয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ। বিএনপির কর্তৃত্ব যে পরিবারের কাছে, সে পরিবারের বড় ছেলে তিনবার সাংসদ হয়েছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে বড় দুই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীও তাঁরা। এর বাইরে বিএনপিতে শুধু এক প্রবাসীর নাম শোনা যাচ্ছে।
আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলা নিয়ে চট্টগ্রাম-১৩ আসন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর প্রয়াত দুই সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও আতাউর রহমান খান কায়সারের উত্তরসূরিরাই এই আসনে দলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। আখতারুজ্জামানের মৃত্যুর পর শূন্য আসনে ২০১৩ সালে তাঁর বড় ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী সাংসদ হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনে আবার সাংসদ হওয়ার পর তিনি হন ভূমি প্রতিমন্ত্রী। আর আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা আয়েশা খান সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ। প্রয়াত দুই নেতার দুই উত্তরসূরির যেকোনো একজন আগামী নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন, এটি অনেকটা নিশ্চিত।

বিএনপিতে এখন দুটি ধারা
সাবেক সাংসদ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম এবারও মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সৌদিপ্রবাসী ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। তিনি সৌদি আরব শ্রমিক দলের সভাপতি।
স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ সরওয়ার জামাল নিজামদের পরিবারের বাইরে আলাদা বলয় গড়ে তুলেছে। এলাকায় এখন বিএনপির দুটি পক্ষ সক্রিয়। কমিটিও দুটি। দলীয় কর্মসূচিও পৃথকভাবে পালন করে তারা।
আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির একটি অংশকে সমর্থন দিচ্ছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতিসহ অন্য নেতারা। এই অংশের সভাপতি মোশাররফ হোসেন। অন্য কমিটির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী সরওয়ার জামালের পরিবারের সঙ্গে রয়েছেন।
উপজেলা বিএনপির একাংশের সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মোস্তাফিজুর রহমান মনোনয়ন চাইবেন। তিনি কাজও করছেন। প্রবীণ নেতা কবির চৌধুরীও প্রার্থী হতে পারেন। এ ছাড়া আমি নিজেও মনোনয়ন চাইব।’
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চার-পাঁচ বছর ধরে এলাকায় দল গোছানোর কাজ করছেন। মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী তিনি।
একাংশের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, ২০০৮ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর দু-একটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে দলের কোনো কর্মসূচিতে সরওয়ার জামাল নিজাম অংশ নেননি। কর্মীরাও বিপদের সময় তাঁকে পান না।
২০০৩ সালে বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন হত্যার ঘটনায় নিজাম পরিবার জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। তবে মামলার অভিযোগপত্র থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁর ভাই মারুফ নিজামের নাম বাদ দেয় পুলিশ। এ ঘটনার রেশ এখনো রয়ে গেছে। সরওয়ার জামাল নিজাম ১৯৯৬ সালে প্রায় ১১ হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতাউর রহমান খান কায়সারকে হারান। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে প্রায় ৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন আখতারুজ্জামান চৌধুরীকে। তবে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তাঁকে প্রায় ২৩ হাজার ভোটে হারিয়ে জয়ী হন আখতারুজ্জামান চৌধুরী। নিজামের অনুসারী আনোয়ারা উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক বলেন, আনোয়ারায় নিজাম ছাড়া নির্বাচন করার মতো দলে শক্তিশালী কোনো প্রার্থী নেই। তিনি তিনবারের সাংসদ। বেশির ভাগ নেতা-কর্মী তাঁর পক্ষে।

আওয়ামী লীগে দুই নেতার উত্তরসূরি
নিয়ম করে প্রতি শুক্র ও শনিবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ করছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তাঁর অনুসারী আনোয়ারা উপজেলার বারশাত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাইয়ুম শাহ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর (সাইফুজ্জামান) পক্ষে নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ।
সাইফুজ্জামান বলেন, দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন তিনি। নেত্রী যদি তাঁকে যোগ্য মনে করেন এবং তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা চান, তাহলে তিনি নির্বাচন করবেন। এলাকার উন্নয়নে দলমত–নির্বিশেষে কাজ করেছেন। কাজের মূল্যায়ন করে মানুষ তাঁর পক্ষে রায় দেবেন বলে তিনি আশাবাদী।
অন্যদিকে ওয়াসিকা আয়েশা খানও মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি এলাকার বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের একটি অংশ তাঁর সঙ্গে আছে। ওয়াসিকা বলেন, মনোনয়ন চাওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার। দল যদি চায় তাহলে নির্বাচন করবেন তিনি।

অন্য দল
ইসলামী ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব এম এ মতিন এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন। তিনি ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী ছিলেন। ভোট পান ৪ হাজার ৩০৯টি। এ ছাড়া মহাজোটের বাইরে জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করলে দলের চট্টগ্রাম নগর কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তপন চক্রবর্তী এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন বলে নেতা-কর্মীরা জানান।