অস্ত্রধারী নিয়াজুল অভিযুক্ত, বাদ শাহ নিজামের নাম

মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তাঁর  সমর্থকদের ওপর সশস্ত্র হামলার সময়  নিয়াজুল ইসলাম।  ফাইল ছবি
মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তাঁর সমর্থকদের ওপর সশস্ত্র হামলার সময় নিয়াজুল ইসলাম। ফাইল ছবি
>
  • ১৭ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জে মেয়র আইভীর ওপর হামলা
  • ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন।
  • তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন কাল জমা দেওয়ার কথা।
  • তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিতে এ পর্যন্ত ছয়বার সময় নিয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর হামলার ঘটনায় সেই অস্ত্রধারী নিয়াজুল ইসলামকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি। তবে তদন্ত প্রতিবেদনে থাকছে না ওই দিনের ঘটনায় অপর অস্ত্রধারী সাংসদ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজামের নাম।

কাল বৃহস্পতিবার এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা। এ পর্যন্ত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ছয়বার সময় নিয়েছে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে।

যদিও তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি প্রথম আলোকে বলেছেন, ওই দিন শাহ নিজাম ও নিয়াজুলের অস্ত্রসহ ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। তাঁরা সবাই শামীম ওসমানের লোক হিসেবে পরিচিত। এই ঘটনার আগের দিন শামীম ওসমানের উসকানিমূলক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যও গণমাধ্যমে এসেছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ নগরীতে ফুটপাতে হকার বসানো নিয়ে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জসিম উদ্দিন হায়দারকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়। ওই সময় কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়। কিন্তু পাঁচ মাস পার হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানান, ওই দিনের ঘটনায় সাংসদ শামীম ওসমানের সংশ্লিষ্টতা থাকলেও কেউ তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়নি। তাই তাঁরা তদন্ত প্রতিবেদনে তাঁকে অভিযুক্ত করতে পারেননি।

তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জসিম উদ্দিন হায়দার গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি ওই দিনের ঘটনায় গণমাধ্যমে আসা নিউজ, ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা, প্রত্যক্ষদর্শী, হকার, নাগরিক সমাজ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এ কারণে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে সময় লেগেছে। আশা করি বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।’ তবে তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ‘তদন্ত কমিটির কাছে যে বক্তব্য দিয়েছি, সেই বক্তব্যের কোনো তথ্য তারা সংগ্রহ করেনি। ওসমান পরিবারের চাপে প্রকৃত অপরাধীদের বাদ দিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করলে আবার তদন্তের দাবি জানাব।’

এদিকে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তার দাখিল করা লিখিত এজাহারটি পুলিশ গত চার মাসেও মামলা হিসেবে রুজু করেনি। অন্যদিকে পুলিশের দায়ের করা অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাটির তদন্তে গত চার মাসেও কোনো অগ্রগতি নেই। ধরা পড়েননি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নিয়াজুল ইসলাম ও শাহ নিজাম।

গত ১৬ জানুয়ারি নগরীর চাষাঢ়ায় ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে মেয়র আইভী ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হকার ও সাংসদ শামীম ওসমানের সমর্থকদের সশস্ত্র হামলায় মেয়র আইভী, সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়। এ সময় সাংসদ শামীম ওসমানের ক্যাডার অস্ত্রধারী নিয়াজুল ইসলাম ও শাহ নিজামকে পিস্তল হাতে গুলি করতে দেখা গেছে।