সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যার অনুমতি দেয় না: তথ্যমন্ত্রী

হাসানুল হক ইনু
হাসানুল হক ইনু

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে হত্যাকাণ্ডের তকমা দেবেন না। এই সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যার অনুমতি দেয় না।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে তথ্য কমিশনের সভাকক্ষে প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদের সভাপতিত্বে ‘তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, বিএনপির যে নেতা আর দোসররা জঙ্গি-মাদক দমন যুদ্ধে হতাহতের ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলে চালাতে চান, তাদের পূর্বসূরি জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়াই এ দেশে বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ডের হোতা। তারাই একাত্তরের খুনি-রাজাকার, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী ও অপারেশন ক্লিনহার্টের হত্যাকারীদের জায়েজ করতে আইন করেছিল। একুশে আগস্ট ও আগুন–সন্ত্রাসের খুনিদের বাঁচাতে এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’


তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আর গণতন্ত্র মানে আইনের শাসন। এ কারণে এ সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অনুমতি দেয় না। একাত্তরের গণহত্যা, বঙ্গবন্ধু হত্যা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারীদের মধ্যে স্বীকৃত খুনিদেরও বিনা বিচারে হত্যা করা হয়নি, বহু বছর পরে হলেও শেখ হাসিনার সরকারই তাদের বিচারের আওতায় এনেছে।’

‘অপর দিকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের দায়মুক্তির আইন করে জিয়া তাদের পুরস্কৃত করেছিল আর খালেদা জিয়া ক্লিনহার্ট অপারেশনে ৮০ জনের অধিক মানুষ হত্যার দায়মুক্তির আইন করেছিল।’ বলেন ইনু।

তথ্য অধিকার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রশাসনের কর্মচারীদের কর্মসম্পাদনে মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে এবং সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রশাসনে নজরদারির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় জনসেবার কাজে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতেই বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরই তথ্য অধিকার আইন পাস করে।’

তথ্য গোপন করলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়, তাই তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতের মাধ্যমে জনগণের মধ্য থেকে বিভ্রান্তি দূর করে জঙ্গি, মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে, বলেন হাসানুল হক ইনু।

প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ বলেন, ‘তথ্যই শক্তি। ব্রিটিশ আমল থেকে তথ্য না দেওয়ার যে সংস্কৃতি কর্মকর্তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে বের হয়ে এসে তথ্য প্রদানের মনোভাব তৈরি করতে হবে এবং স্বতঃপ্রণোদিতভাবেই তথ্য প্রকাশ করতে হবে। রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল স্তরে স্বচ্ছতা আনা, জবাবদিহি নিশ্চিত এবং দুর্নীতি দমনের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তথ্য অধিকার আইন অনবদ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।’

তথ্য অধিকার আইনই একমাত্র আইন যেটি জনগণ কর্তৃপক্ষের ওপর প্রয়োগ করে, উল্লেখ করে প্রধান তথ্য কমিশনার বলেন, তথ্য অধিকার আইনের ব্যাপক প্রচার ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সরকারি-বেসরকারি সকল সংস্থা ও ব্যক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে।

তথ্যসচিব আবদুল মালেক বলেন, বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের সহযোগিতা নিয়ে তথ্য অধিকার আইনের ব্যাপক প্রচার প্রয়োজন। প্রত্যেক অফিসে তথ্য প্রাপ্তির আবেদন ফরম সহজলভ্য করার প্রস্তাব করেন তিনি।

তথ্য কমিশনার নেপাল চন্দ্র সরকার তথ্য অধিকার আইনের উৎপত্তি, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, তথ্য প্রকাশের পদ্ধতি, তথ্য সরবরাহ নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষের করণীয়, তথ্য কমিশন কর্তৃক এ পর্যন্ত গৃহীত পদক্ষেপসমূহ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রধান তথ্য অফিসার কামরুন নাহার, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুয়াল হোসেনসহ কর্মশালায় অংশ নেওয়া ত্রিশটি সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিরা তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুতির লক্ষ্যে যে প্রস্তাব উপস্থাপন করেন, তা কমিশনের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে অত্যন্ত সহায়ক হবে, বলে জানিয়েছেন তথ্য কমিশন সচিব মো. মুহিবুল হোসাইন।