এবারও নিয়মিত ফ্লাইটসূচি তছনছ হবে বিমানের?

>
  • ১০টি উড়োজাহাজ দিয়ে ১৫টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট চালানো হয়।
  • এর মধ্যে ৪টি হজ ফ্লাইটে নিয়োজিত করা হবে।
  • বাকি ৬টি উড়োজাহাজ দিয়ে হজের আগে ও পরে দুই মাস নিয়মিত ফ্লাইটগুলো পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
  •  বিপর্যয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের ফ্লাইট। এসব গন্তব্যের মূল যাত্রী প্রবাসী শ্রমিকেরা।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রাক্ ও ফিরতি হজ ফ্লাইটসূচি গত শুক্রবার সৌদি কর্তৃপক্ষ অনুমোদন করেছে। এরপর শনিবার বিমান কর্তৃপক্ষ ১৪ জুলাই থেকে প্রাক্-হজ ফ্লাইট শুরুর ঘোষণা দেয়। বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, হজ ফ্লাইটের জন্য বিমানের নিজস্ব তিনটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর (প্রতিটি ৪১৯ আসনের) ও আগে থেকে নিয়মিত ফ্লাইটের জন্য ভাড়ায় আনা একটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ (৪০০ আসনের) উড়োজাহাজ শুধু হজযাত্রী আনা-নেওয়ায় ব্যবহার করা হবে।

কিন্তু এখন বিমানবহরে আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনার মতো উড়োজাহাজ আছে কেবল ১০টি। এর মধ্যে ৫টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, ৪টি বোয়িং ৭৩৭ ও ১টি বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজ। এর মধ্যে ৬টি নিজস্ব ও ৪টি ভাড়ায় আনা। এসব উড়োজাহাজ দিয়ে বিদ্যমান ১৫টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যের ফ্লাইটসূচি ঠিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছে বিমান। এখন হজ মৌসুমে চারটি উড়োজাহাজ কেবল হজযাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত করতে গেলে আন্তর্জাতিক গন্তব্যের ফ্লাইটসূচি তছনছ হয়ে পড়বে বলে বিমানের একাধিক কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের ফ্লাইট। যেখানে বেশি প্রবাসী শ্রমিক থাকেন এবং যাঁরা বিমানে যাতায়াত করে থাকেন।

বিমানের হিসাব শাখার তথ্যানুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির মোট রাজস্ব আয়ের ৬৫ শতাংশ আসে আন্তর্জাতিক গন্তব্যের টিকিট বিক্রি করে। হজ ফ্লাইট থেকে আসে রাজস্ব আয়ের ১৫ শতাংশ।

তা ছাড়া হজ ফ্লাইট রাষ্ট্রীয়ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য অনেক আগে থেকেই হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য হজযাত্রী অনুপাতে উড়োজাহাজ ভাড়া করার প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়। কিন্তু প্রায় বছরই সময়মতো সঠিক উড়োজাহাজ ভাড়া করতে না পারার কারণে বিমান সমালোচনার মুখে পড়ে। উড়োজাহাজ ভাড়া করার ক্ষেত্রে কমিশন-বাণিজ্যের পুরোনো অভিযোগ তো আছেই। গত বছরও হজ ফ্লাইট ঠিক রাখতে নিয়মিত ফ্লাইট কাটছাড় করতে হয়। তবে গত বছরের শুরুতে পর্যাপ্ত যাত্রীর অভাবে অনেক হজ ফ্লাইট বাতিলও করতে হয়েছিল।

বিমানের উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করার শর্তে প্রথম আলোকে জানান, নানা মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে বিমানের উড়োজাহাজ ভাড়া করার ক্ষেত্রে সব সময় কোনো না কোনো সমস্যা হয়। ফলে এখন আর ভালো লিজিং কোম্পানিগুলো বিমানের দরপত্রে অংশ নিতে আসে না।

বিমানের মুখপাত্র মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা স্বল্পসময়ের জন্য চারটি উড়োজাহাজ (ক্রুসহ) ভাড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মধ্যে দুটি এসেছে, বাকি দুটির জন্য দরপত্র আহ্বান (আরএফপি) করেছে; যা এখন প্রক্রিয়াধীন আছে।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ফ্লাইট গ্লোবাল নামক প্রতিষ্ঠান থেকে মালয়েশিয়ায় নিবন্ধিত দুটি উড়োজাহাজ (ক্রুসহ) ভাড়া করা হয়েছে, যা নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনায় যুক্ত হয়েছে। কারণ, আগের ভাড়ায় আনা দুটি উড়োজাহাজ ফেরত গেছে। আবার, ফ্লাই গ্লোবাল থেকে আনা দুটি উড়োজাহাজের জন্য প্রতিষ্ঠানটি যথেষ্টসংখ্যক পাইলট সরবরাহ করতে পারছে না। বাংলাদেশ বিমানের কাছে যথেষ্ট পাইলট থাকলেও ক্রুসহ ভাড়া করায় (ওয়েট লিজ) আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির কারণে বাংলাদেশের লাইসেন্সধারী পাইলট ওই দুটি উড়োজাহাজ পরিচালনা করতে পারছে না।

এই অবস্থায় দুটি উড়োজাহাজ ভাড়া করার দরপত্র প্রক্রিয়াধীন থাকার যে কথা বলা হচ্ছে, সেই দুটি উড়োজাহাজ ১৪ জুলাইয়ের আগে না এলে ফ্লাইট পরিচালনা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে? এ প্রশ্নের জবাবে বিমানের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না, তা বলা মুশকিল। তেমনটা হলে ফ্লাইটসূচি প্রয়োজনে পুনর্বিন্যাস করা হবে।