ডিবি, পিআইবির হাত ঘুরে ৪ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ সিআইডির

চিকিৎসকদের অবহেলায় কলেজপড়ুয়া মেয়ের মৃত্যুর অভিযোগ এনে তিন বছর আগে মামলা করেছিলেন সুফিয়া সরকার। তাঁকে নানা প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। কিন্তু এসবের কাছে নতও হননি এবং হালও ছাড়েননি সুফিয়া সরকার। 

তাঁর চেষ্টায় থানা-পুলিশ, পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), পুলিশের তদন্ত সংস্থার (পিবিআই) হাত ঘুরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওই ঘটনায় চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। গত বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন এবং বিচার নিষ্পত্তির জন্য মামলার নথি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের কাছে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, সুফিয়ার মেয়ে শারমিন সরকার গাজীপুর সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। মেয়ের গলায় সমস্যা নিয়ে ২০১৫ সালের ৩০ মে উত্তরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যান সুফিয়া। সেখানকার নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ফিরোজ আহমেদ বলেন, গলায় সিস্ট আছে। রোগটি খুব খারাপ। ছোট (মাইনর) একটি অস্ত্রোপচার করতে হবে। অস্ত্রোপচারটি তিনি নিজেই করবেন বলে শারমিনের পরিবারকে জানান। তাঁর পরামর্শে ৩ জুন শারমিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তিনি অস্ত্রোপচার করেননি। পরদিন নাক, কান ও গলা রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল হোসেনকে ওই অস্ত্রোপচারের দায়িত্ব দেন ফিরোজ আহমেদ। ওই দিন সকাল ১০টার দিকে অস্ত্রোপচার শুরু করেন ফিরোজ আহমেদ।
অস্ত্রোপচারের সময় অবেদনবিদ হিসেবে ছিলেন হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের ফায়জুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি শারমিনকে অজ্ঞান করেন। এরপর অস্ত্রোপচার শুরু করেন আবুল হোসেন। অস্ত্রোপচার শেষ হওয়ার আগেই ওটি-বয় জামালের হাতে অ্যানেসথেসিয়ার দায়িত্ব দিয়ে চলে যান অবেদনবিদ ফায়জুল ইসলাম। এরপর তিনি অপারেশন থিয়েটারে আর ফেরেননি। কোনো অবেদনবিদ ছাড়াই ওটি-বয় জামালের সহায়তা নিয়ে অস্ত্রোপচার করেন আবুল হোসেন। এরপরই রোগীর অবস্থার অবনতি হতে থাকলে ওটি-বয় জামাল হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের প্রধান এম এ করিমকে ফোন করেন। এম এ করিম এরপরও অস্ত্রোপচার কক্ষে না এসে রোগীকে না দেখেই ফোনে জামালকে একটি ইনজেকশন দিতে বলেন। জামাল রোগীর শিরায় ইনজেকশন পুশ করেন। অস্ত্রোপচার শেষ হওয়ার পর এম এ করিম অপারেশন থিয়েটারে ফিরে রোগীর লাইফসাপোর্ট খুলে নিয়ে পোস্ট অপারেটিভ কক্ষের নার্স কাজল ও আয়া শেবুতুনেচ্ছার কাছে রোগীকে হস্তান্তর করেন। ওই সময় পোস্ট অপারেটিভ কক্ষেও কোনো চিকিৎসক ছিলেন না।
শারমিনের মা সুফিয়া সরকার অভিযোগ করেন, ‘মাইনর অপারেশনে’ দুই ঘণ্টা লাগার কারণে তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি জোর করে পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে ঢুকে দেখতে পান শারমিন যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। এ সময় চিকিৎসক ও নার্সরা তাঁকে বের করে দেন। বেলা ২টার দিকে শারমিনকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে নেওয়া হয়। ১৩ জুন রাত ১০টার দিকে শারমিনের মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনায় শারমিনের মা সুফিয়া সরকার ২ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা থানায় চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। চার চিকিৎসক হলেন হাসপাতালটির নাক, কান ও গলা রোগ বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ খান, একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল হোসেন, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের এম এ করিম ও ফায়জুল ইসলাম চৌধুরী।
এরপর মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা-পুলিশ। এরপর ডিবি ও পিবিআই তদন্ত করে। তবে তারা ঘটনার সত্যতা পায়নি। মামলার বাদী দুই দফায়ই চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেন। সর্বশেষ সিআইডি মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায়। চিকিৎসকের অবহেলায় শারমিনের মৃত্যু হয়েছে বলে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়ায় চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি।