নাটোরে হালিমের দোকানটিতে লেগে থাকে ভিড়

শহরবাসীর কাছে ইফতারির একটি বিশেষ পদ ঘরোয়া রেস্তোরাঁর হালিম। নাটোর, ২ জুন। ছবি: প্রথম আলো
শহরবাসীর কাছে ইফতারির একটি বিশেষ পদ ঘরোয়া রেস্তোরাঁর হালিম। নাটোর, ২ জুন। ছবি: প্রথম আলো

বিকেল থেকেই জায়গাটি ঘিরে ভিড় লেগে যায়। ক্রেতাদের তাগাদায় দ্রুত হাত চালিয়েও কূল পান না বিক্রেতা। পাশে আরও অনেক পণ্য থাকলেও শুধু ওই একটি ‘পদ’ ঘিরেই যেন সবার আগ্রহ। রমজান শুরু হওয়ার পর থেকে দেখা যাচ্ছে এ চিত্র। নাটোর শহরের বাসিন্দারা ঘরোয়া রেস্তোরাঁর সামনে হালিম কেনার জন্য এমন ‘লাইন’ ধরেন।

রমজান শুরুর পর থেকে প্রতিদিন দুপুর গড়ালে নাটোরের অলিগলিতে চোখে পড়ে ইফতারি পণ্য বিক্রির ছোট-বড় দোকান। প্রায় সব দোকানে পাওয়া যায় বেগুনি, পেঁয়াজু, চপ, জিলাপি, বুন্দিয়া ও ঝুড়ি-পাঁপড়। একটি মাত্র পদ শুধু পাওয়া যায় নাটোর শহরের প্রাণকেন্দ্র কানাইখালী পুরোনো বাসস্ট্যান্ডের ঘরোয়া রেস্তোরাঁয়। এটা হচ্ছে ‘ঘরোয়া হালিম’। শহরবাসীর কাছে এটা ইফতারির একটি বিশেষ পদ। তাই প্রতিদিন দুপুর গড়ালেই ঘরোয়া রেস্তোরাঁর সামনে হালিম কেনার ভিড় জমে।

রেস্তোরাঁর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা যায়, পরিমাণভেদে দুই আকৃতির প্লাস্টিকের বাটিতে হালিম বিক্রি করা হয়। বড় আকৃতির (এক কেজি) প্রতি বাটি হালিমের দাম ১২০ টাকা, ছোট আকৃতির (আধা কেজি) প্রতি বাটি ৭০ টাকা। রমজানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রতিদিন অন্তত ২০০ বাটি হালিম বিক্রি হয়ে থাকে। ক্রেতাদের সুবিধার্থে হালিমসহ ইফতারি পণ্য বিক্রির জন্য দুপুরের পর রেস্তোরাঁর সামনে অস্থায়ী বিক্রয়কেন্দ্র খোলা হয়। ফলে ইফতারি পণ্য কেনার জন্য ক্রেতাদের রেস্তোরাঁর দোতলায় ওঠার দরকার হয় না।

গতকাল শনিবার বিকেল পাঁচটায় ঘরোয়া রেস্তোরাঁর সামনে গিয়ে দেখা যায়, অন্যদিনের মতো সেখানে অস্থায়ী ইফতারির বিক্রয়কেন্দ্রটি নেই। প্রতিদিন যেখানে বেচাকেনা হয়, সেখানে হাঁটুপানি জমে আছে। তবে একটু খোঁজাখুঁজি করতেই দেখা গেল রেস্তোরাঁর সামনের সড়কের বিপরীত দিকে নাটোর প্রেসক্লাবের সামনে ঘরোয়ার অস্থায়ী দোকান বসেছে। দুপুরে ভারী বর্ষণের কারণে অস্থায়ী কেন্দ্রটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, হালিম কিনতে এসেছেন অনেকে। তাঁদেরই একজন মো. হিলফুল। তিনি জানান, কাজের ব্যস্ততার কারণে বাড়িতে ইফতারের তেমন একটা খোঁজখবর নিতে পারেন না। তাই প্রতিদিন বাড়ি ফেরার আগে সহকর্মীদের নিয়ে এই দোকানে আসেন ইফতারি কেনার জন্য; বিশেষ করে ঘরোয়া হালিম কেনার জন্য।

তাঁর ভাষ্য, ‘ঘরোয়া হালিম আমাদের কাছে ইফতারির বিশেষ একটা পদ। পরিবারের সবাই আমরা এই হালিম পছন্দ করি।’

অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মো. সেলিমও এসেছিলেন হালিম কিনতে। তিনি বলেন, হালিম এমনিতেই তাঁর প্রিয় খাবার। তাই রোজার সময় তাঁর ইফতারির আয়োজনে মাঝেমধ্যে হালিম থাকে। তবে ঘরোয়ার হালিম কিনতে ভিড়ের মধ্যে পড়তে হয় বলে তিনি নিজে নিয়মিত আসেন না বলে জানালেন।

স্বাদ ও পুষ্টির কারণে ঘরোয়া হালিমের কদর বেশি বলে মনে করেন ঘরোয়া হালিমের কারিগর মনু মণ্ডল। তিনি বলেন, স্বাদ ও পুষ্টিতে অনন্য হওয়ায় ঘরোয়ার হালিম সবাই কিনতে চায়। স্বাদ ও পুষ্টির গুণগত মান বাড়াতে ছয় রকমের ডাল (মটর, ছোলা, মাষকলাই, মুগডাল, খেসারি ও অ্যাংকর ডাল) দিয়ে এই হালিম রান্না করা হয়। খরচের কথা চিন্তা না করে হালিমে মানসম্মত খাসির মাংস ও মসলা ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, ‘ইফতারের কথা মাথায় রেখে আমরা গরম হালিম পরিবেশন করে থাকি। পরিবেশনের আগমুহূর্তে হালিমে বেরেস্তা, টক ও সালাদ মিশিয়ে দিয়ে থাকি। ফলে ইফতারির সময় রোজাদারেরা ঝামেলা ছাড়াই হালিম খেতে পারেন।’