দণ্ড দিয়ে ভণ্ড কবিরাজকে কারাগারে পাঠাল ভ্রাম্যমাণ আদালত

কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়া

রকিবুল ইসলামের বয়স ৩০। ২০০৬ সালে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছিলেন। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ নেননি। এরপর পড়াশোনাও আর এগোয়নি। এই রকিবুলই এখন নাকি সর্বরোগ নিরাময়ের কবিরাজ। তিনি সব ধরনের রোগ সারাতে পারেন, এই বিশ্বাসে তাঁর কাছে প্রতিদিন শত শত নারী-পুরুষ জড়ো হচ্ছিলেন। চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত পার পেলেন না। সম্প্রতি এলাকায় কিছু সচেতন লোক তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে অভিযোগ তোলে। তাদের দাবি, রকিবুল সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভণ্ডামি করে যাচ্ছেন। অভিযোগ পেয়ে আজ সোমবার দুপুরে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবইল ইউনিয়নের গোবিন্দগুনিয়া উত্তরপাড়া এলাকায় রকিবুলের আস্তানায় অভিযান চালান ইউএনও এসএম জামাল আহমেদ। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) রাকিবুল ইসলাম, মিরপুর থানার পরিদর্শক আজিজুর রহমান। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত রকিবুলকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন।

রকিবুল ইসলাম উপজেলার বহলবাড়িয়া গ্রামের আল্লেক মালিথার ছেলে। মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী হাকিম এসএম জামাল আহমেদের দেওয়া তথ্যমতে, প্রায় দুই বছর ধরে রকিবুল নিজ গ্রামের পাশের অন্য একটি গ্রামে জনৈক রহিমের বাড়িতে গিয়ে আস্তানা গড়ে। একটা টিনশেডের বড় ঘরের চারপাশে পাটকাঠির বেড়া। মেঝে মাটির। সরেজমিনে সোমবার সেখানে গিয়ে দেখা যায় ঘরের ভেতর শতাধিক মানুষ। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী। তারা বেশির ভাগই অর্ধ শিক্ষিত ও দরিদ্র পরিবারের। তাদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ ও ১০ শিশু ছিল।

ঘরের ভেতর কয়েকটা লাইনে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। এরা বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত। এদের মধ্যে কেউ কেউ রকিবুলের অন্ধ ভক্ত। রকিবুলের ঝাড়-ফুঁকে তাদের রোগ নাকি ভালো হয়ে যায়। একজনকে পাওয়া গেছে তার শরীরের ভাল্ব নষ্ট হয়ে গেছে। ভারতে গিয়েও রোগ সারাতে পারেননি। তাই তিনিও কবিরাজের আস্তানায় হাজির হয়েছেন।

রকিবুল ইউএনওকে জানায়, বেশ কয়েক বছর আগে ইরানের এক হুজুরের কাছ থেকে বয়ান ও মন্ত্র শুনেছিলেন। সেই থেকে তিনি ঝাড়-ফুঁকের মাধ্যমে মানুষের রোগ সারিয়ে দিচ্ছেন। তবে এতে তিনি কোনো টাকা নেন না। রোগীরা খুশি হয়ে জানের বদলে জান হিসেবে আস্তানায় গরু, ছাগল ও মুরগি সরবরাহ করে থাকে।

মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘চিকিৎসা সনদ ছাড়া সেবা দেওয়া যায় না। রকিবুল যেভাবে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছিল সেটা আইন সম্মত নয়, প্রতারণা।’

ইউএনও ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী হাকিম এসএম জামাল আহমেদ বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের জীবন বিপন্নকারী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল রকিবুল। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ সালের ৫৩ ধারায় তাঁকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পরে পুলিশ তাঁকে সরাসরি কারাগারে পাঠায়।