সমঝোতায় বদলে গেল ১৩ সড়কের চিত্র

মধ্য পাইকপাড়ার ১২ ফুট প্রস্থের সড়কটি এখন ২০ ফুট চওড়া। পুরো প্রক্রিয়া হয়েছে আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা।  ছবি: প্রথম আলো
মধ্য পাইকপাড়ার ১২ ফুট প্রস্থের সড়কটি এখন ২০ ফুট চওড়া। পুরো প্রক্রিয়া হয়েছে আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। ছবি: প্রথম আলো

বদলে গেছে কল্যাণপুর ও পাইকপাড়া এলাকার ১৩টি সড়কের চিত্র। ৮ থেকে ১২ ফুট প্রস্থের সড়কগুলো এখন ২০ ফুট চওড়া। আগে যে সড়কে পাশাপাশি দুটি রিকশা চলতে পারত না, সেখানে চলছে দুটি ট্রাক। সড়কগুলো প্রশস্ত করতে সরকারের কোনো সংস্থাকে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে হয়নি। পুরো প্রক্রিয়াটি হয়েছে আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে।
কল্যাণপুর ও পাইকপাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নান। ২০১৫ সালের মে মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পরেই তিনি এলাকার সড়কগুলো প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেন। প্রতিটি সড়কের পাশের ভবনমালিকদের সঙ্গে তিনি দফায় দফায় আলোচনা করেন। সমঝোতার ভিত্তিতে সড়কে গড়ে তোলা স্থাপনা ভবনমালিকেরাই সরিয়ে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কগুলো প্রশস্ত করা সময়ের দাবি। এলাকাবাসী ও মালিকদের সঙ্গে বসে তাঁদের বুঝিয়েছি। পর্যায়ক্রমে একটি করে সড়কের কাজ ধরেছি। এখন পর্যন্ত ১৩টি সড়ক প্রশস্ত করার কাজ শেষ হয়েছে। এলাকার ৮ থেকে ১২ ফুট প্রস্থের সব সড়ক অন্তত ২০ ফুট করা হবে।’
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী কল্যাণপুর ও পাইকপাড়া এলাকার ভেতরের সড়কগুলো ২০ ফুট প্রশস্ত হওয়ার কথা। সড়কের পাশের ভবনমালিকেরা স্থাপনা গড়ে তোলায় সেগুলো প্রস্থে কমে গেছে। এলাকার কোন সড়ক বাস্তবে কত ফুট আছে, সড়কের জায়গায় কী ধরনের স্থাপনা আছে, তার তালিকা তৈরি করে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়।
তালিকা অনুযায়ী, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ছোট-বড় ৩৫টি সড়কের ওপর মোট ১ হাজার ১২৩টি ভবনের অংশবিশেষ রয়েছে। এই তালিকা ধরে কাউন্সিলরসহ এলাকার গণমান্য ব্যক্তিরা ভবনমালিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। একটি একটি করে সড়ক প্রশস্ত করার কাজ শুরু হয়। কাউন্সিলরের নেতৃত্বে একটি দল সড়ক থেকে কত ফুট স্থাপনা সরিয়ে নিতে হবে, তা ভবনের দেয়ালে লাল কালিতে লিখে দেন। মালিকেরা সে অনুযায়ী সরিয়ে নিয়েছেন।

দেওয়ান আবদুল মান্নান  কাউন্সিলর, ১১ নম্বর ওয়ার্ড, ডিএনসিসি
দেওয়ান আবদুল মান্নান কাউন্সিলর, ১১ নম্বর ওয়ার্ড, ডিএনসিসি

গত শুক্র ও রোববার প্রশস্ত করা হয়েছে এমন কয়েকটি সড়ক ঘুরে দেখা যায়, ভবনমালিকেরা স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার পরে সড়কগুলো নতুন করে সংস্থার করা হয়েছে। প্রশস্ত করার কাজ শেষ হওয়ার পরে এলাকার চিত্র বদলে গেছে। ভবনমালিকদের সরিয়ে নেওয়া দেয়াল বা ভবনের অংশের কিছু চিহ্ন এখনো রয়েছে।
পাইকপাড়া অনির্বাণ কল্যাণ সমিতির সভাপতি শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের চলাচলের সুবিধার জন্য কাউন্সিলর উদ্যোগ নিয়েছেন। ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে আমরা সহযোগিতা করেছি। স্বেচ্ছায় বাড়ির মালিকেরা স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। সড়কগুলো চওড়া হওয়ায় এলাকার লোকজন খুশি।’
বর্তমানে কল্যাণপুর ১১ নম্বর সড়ক চওড়া করার কাজ চলছে। দেখা যায় পুরো সড়কে বাড়ির দেয়াল সরিয়ে নেওয়ার চিহ্ন। কিছু বাড়ির দেয়াল সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। পাশাপাশি সড়কে পানিনিষ্কাশনের নালা বসানোর কাজ চলছে। স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া শেষ হলে সড়কটি ঢালাই দেওয়া হবে।
কাউন্সিলর কার্যালয়ের হিসাবে, প্রশস্ত করা ১৩টি সড়কের মোট ৬০৫টি ভবনের মালিক নিজেরাই সড়কে চলে আসা ভবনের অংশ সরিয়ে নিয়েছেন। তবে দু-একটি ভবনের মালিক এখনো স্থাপনা সরিয়ে নেননি। সড়ক চওড়া করার কাজ শুরু করার প্রথম দিকে বিভিন্ন মহল থেকে বাধা দেওয়া হলে তা সফল হয়নি বলে জানান স্থানীয় কাউন্সিলর।
তবে সড়ক চওড়া হলেও কিছু বিড়ম্বনা রয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি সড়ক চওড়া করায় আগে স্থাপন করা বৈদ্যুতিক খুঁটি এখন সড়কের মাঝে চলে এসেছে। কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নান বলেন, ডেসকো বিদ্যুতের খুঁটিগুলো সরিয়ে নিলে লোকজন সড়ক প্রশস্ত করার সুবিধা পুরোপুরি পাবেন। খুঁটিগুলো সরিয়ে নিতে ডেসকো টাকা দাবি করছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে ডেসকোর আগারগাঁও অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা আবু নাসেরের মুঠোফোনে গতকাল মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।