নির্ধারিত সময়েও শেষ হয়নি রাজবাড়ী পৌরসভার সড়ক সংস্কার

দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ভারী যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। রাজবাড়ী পৌরসভা, ৯ জুন। ছবি: প্রথম আলো
দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ভারী যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। রাজবাড়ী পৌরসভা, ৯ জুন। ছবি: প্রথম আলো

সড়ক সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার কথা এপ্রিলে। কিন্তু দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সেই কাজ এখনো শেষ হয়নি। এদিকে দীর্ঘদিন সংস্কার না করা ও ভারী যানবাহন চলাচল করার কারণে রাজবাড়ী পৌরসভার সড়কগুলোর বেহাল দশা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয় লোকজন।

রাস্তার বেহাল দশার কারণে জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করেছেন রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মহম্মদ আলী চৌধুরী। তিনি বলেন, বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ ঠিকমতো করছে না। তবে সম্প্রতি কাজের গতি বাড়িয়েছে।

রাজবাড়ী পৌরসভা সূত্র জানায়, ১৯১৩ সালে স্থাপিত পৌরসভার আয়তন ১১ দশমিক ৬৬ বর্গকিলোমিটার। পৌরসভায় কার্পেটিং করা রাস্তার পরিমাণ ৬৬ দশমিক শূন্য ৬ কিলোমিটার।
পৌরসভার ২৯টি রাস্তা ও দুটি ড্রেন সংস্কারের জন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়। ২৯ প্রকল্পের রাস্তার পরিমাণ ১৭ দশমিক ১৯৭ কিলোমিটার। ঢাকার খিলক্ষেত এলাকার ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স ঢালী কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। কাজের চুক্তিমূল্য ১০ কোটি ২১ লাখ ৪১ হাজার ৩৮১ টাকা। গত বছরের ৯ এপ্রিল চুক্তি হওয়ার পর থেকে কাজ শেষ করার সময় ছিল পরবর্তী এক বছর। সময় অনুসারে গত এপ্রিলে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু শেষ হয়নি কাজ।
পৌরসভা থেকে জানা গেছে, কাজের জন্য ইতিমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক কোটি টাকা বিল নিয়েছে। আরেকটি বিল দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মোট ২৯টি রাস্তার মধ্যে ইতিমধ্যে দুটি রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে। ১৪টি রাস্তার কাজ শুরুই হয়নি। বাকি রাস্তার কোনটির কাজ শুরু হয়েছে, কোনটি অর্ধেক বা কোনটির ৬০-৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শেরেবাংলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তপন কুমার পাল বলেন, ‘আমাদের ওয়ার্ডের সব রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইদানীং রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া সড়কের কাজের জন্য আমাদের এই সড়ক দিয়ে বালু নেওয়া হচ্ছে। এতে করে প্রতি মিনিটে একাধিক বালুবাহী ট্রাক চলাচল করছে। তাই ধুলাবালুতে সবকিছু একাকার হয়ে যাচ্ছে। রাস্তা দিয়ে দিনের বেলায় বালুবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ ও জরুরি ভিত্তিতে রাস্তা মেরামত করা জরুরি।’
ইজিবাইকের চালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তায় খানাখন্দ নিয়ে অনেক দিন ধরে দুর্ভোগের মধ্যে আছি। রাস্তার বেহাল দশার কারণে গাড়ির যন্ত্রাংশ নিয়মিত নষ্ট হচ্ছে। ঝাঁকি লাগায় যাত্রীরা খুব গালাগাল করে। কয়েক দিন পরই বৃষ্টির মৌসুম শুরু হবে। তখন আরও বেশি ঝামেলায় পড়তে হবে।’

রাজবাড়ী পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার রাস্তার এমন বেহাল দশা। ছবি: প্রথম আলো
রাজবাড়ী পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার রাস্তার এমন বেহাল দশা। ছবি: প্রথম আলো

শহরের বড় রাস্তাগুলোতে সম্প্রসারণের কাজ চলায় ধুলাবালু ছেয়ে আছে শহরময়।
পথচারী আলী রেজা বলেন, অসহনীয় ভোগান্তি। এসব রাস্তায় রিকশা বা ইজিবাইকেও চলাচল করা খুব সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তার কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নজর দিতে হবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাহফুজ রহমান বলেন, ‘এই প্রকল্পের ১৬টি রাস্তার কাজ করছেন স্থানীয় এক রাজনীতিবিদ। তিনি অল্প সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে দেওয়ার কথা বলেছেন। আমরা কয়েক দিন আগে কয়েকটি রাস্তার কাজ ধরেছি। এগুলো ঈদের আগেই সম্পন্ন করে দেব। এ ছাড়া বাকি রাস্তার কাজ ঈদের পরে মাসখানেকের মধ্যে শেষ করে ফেলতে পারব।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ ওয়াজেদ আলী বলেন, গত বছর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কার্পেটিং কাজ বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া ২৯টি রাস্তার মধ্যে ছয়টি ছিল আরসিসি (রেইনফোর্সমেন্ট সিমেন্ট কংক্রিট) ঢালাই। এই ছয়টি রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত থাকায় কাজ শুরু করা যায়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে কাজ যথাসময়ে শুরু ও শেষ করা সম্ভব হয়নি।
ওয়াজেদ দাবি করেন, ‘ইতিমধ্যে ৯টি রাস্তার কাজ শতকরা ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৫টি রাস্তার কাজ পুরোটাই সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। মাস দু-একের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করার চেষ্টা করব।’

রাজবাড়ী পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী খান বলেন, ‘ইতিমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কাজ শেষ করেছে। তারা আরও ৯০ দিনের সময় চেয়েছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত তাগিদ দিয়ে যাচ্ছি।’