ঈদের পর পরীক্ষা, এখনো পৌঁছায়নি বই!

বছরের পাঁচ মাস পেরিয়ে ছয় মাস চলছে। ঈদের পর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। কিন্তু এখনো হিন্দুধর্মের পাঠ্যবই পায়নি নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও বেগমগঞ্জ উপজেলার অষ্টম শ্রেণির ১ হাজার ৩২৬ জন শিক্ষার্থী। এ নিয়ে অভিভাবকদের অব্যাহত ক্ষোভের মুখে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন দুটি উপজেলার শিক্ষকেরা।

সুবর্ণচরে অষ্টম শ্রেণিতে হিন্দু শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫২৬ জন, আর বেগমগঞ্জে ৮০০ জন।

সুবর্ণচরের খাসেরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ৭০ জন হিন্দু শিক্ষার্থী রয়েছে। বছরের ছয় মাস চলে যাচ্ছে, এখনো তারা ধর্ম বই পায়নি। আশপাশের এলাকা খোঁজ করে গত বছরের কয়েকটি বই সংগ্রহ করে পাঠ্যদান চলছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তো বাড়িতে গিয়ে পড়তে পারছে না। ঈদের পরই অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। বই ছাড়া শিক্ষার্থীদের কী পরীক্ষা নেবেন, তা নিজেরাও চিন্তিত। তা ছাড়া বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদের নানা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েও তাঁরা প্রতিনিয়ত বিব্রত হচ্ছেন।

একই ধরনের কথা বলেন বেগমগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান। বলেন, তাঁরা বই-সংকটের বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন, কিন্তু এখনো কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

এই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সুফল দাসের ভাষ্য, কিছুদিন পরই অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। এ অবস্থায় অন্য বিষয়ের ভালো প্রস্তুতি থাকলেও হিন্দুধর্ম বই না থাকায় তেমন কিছু পড়তেই পারেনি। তাই এ বিষয়ে কেমন পরীক্ষা হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে সে।

সুবর্ণচরের চরবাটা এলাকার বাসিন্দা ঠাকুর চন্দ্র দাস নামের এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শিক্ষাবর্ষের ছয় মাস চলে যাচ্ছে, এখনো হিন্দুধর্মের পাঠ্যবইয়ের কোনো খবর নেই। ছেলেমেয়েরা বাড়িতে পড়তে পারছে না। কয় দিন পরে পরীক্ষা, খাতায় কী লিখবে?’

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতে বিভিন্ন উপজেলায় ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির পাঠ্যবই সরবরাহ পেতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হয়। এরপরও এই দুই উপজেলার অষ্টম শ্রেণির হিন্দু শিক্ষার্থীদের ধর্ম বই আসেনি।

সুবর্ণচর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি জানুয়ারির ১ তারিখেই এনসিটিবির সচিবকে চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছিলেন কী কী পাঠ্যবই তাঁরা পাননি। এরপর বই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকার কাজল প্রিন্টিং ওয়ার্কের সঙ্গেও দফায় দফায় যোগাযোগ করেন। একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠানের বই সরবরাহের চালানও তিনি আটকে রাখেন। কিন্তু এরপরও প্রতিষ্ঠানটি অষ্টম শ্রেণির হিন্দুধর্মের কোনো বই সরবরাহ করেনি। ইতিমধ্যে বিষয়টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের বৈঠকেও উপস্থাপন করা হয়েছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দিন পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি বারবার এনসিটিবির বিতরণ শাখার কন্ট্রোলারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সর্বশেষ গত মাসের শেষ দিকেও চিঠি দিয়েছেন এবং ফোন করেছেন। পরে তিনি তাঁকে দ্রুত বই পাঠিয়ে দেবেন বলেছেন।

তবে এনসিটিবির বিতরণ শাখার কন্ট্রোলার (বর্তমানে কারিকুলাম শাখার দায়িত্বে) ফরহাদুল ইসলামের ভাষ্য তাঁকে মাত্র ২০ দিন আগে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি এটিকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার চরম দায়িত্বহীনতা বলে মনে করেন।

তবে এরই মধ্যে পাঠ্যবই সরবরাহে গাফিলতির শাস্তি হিসেবে সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে তিন বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে ফরহাদুল ইসলাম বলেন, বই সরবরাহ না করার বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। সরবরাহকারী প্রেস মালিককে দ্রুত বইগুলো সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।