ইফতারে ভোটের প্রচারণা

গাজীপুরের শিমুলতলীতে গতকাল ইফতার মাহফিলে জাহাঙ্গীর আলম (মাঝে বসা)।
গাজীপুরের শিমুলতলীতে গতকাল ইফতার মাহফিলে জাহাঙ্গীর আলম (মাঝে বসা)।
১৮ জুনের আগে প্রচারণা চালাতে ইসির নিষেধাজ্ঞা কেউ মানছেন না। মন্ত্রীরাও ভোট চাইছেন।


ভোটের তারিখ পরিবর্তন হওয়ায় সংশোধিত তফসিল অনুযায়ী ১৮ জুন থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীরা প্রচারের সুযোগ পাবেন। কিন্তু এর আগে রমজানজুড়েই ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই মেয়র পদপ্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচটি ইফতার মাহফিলে অংশ নিচ্ছেন এবং ভোট চাইছেন। এসব মাহফিল আয়োজনের খরচ জোগাচ্ছেন তিনি নিজেই।

নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত নির্বাচনী ব্যয়ের কয়েক গুণ বেশি অর্থ তিনি ইতিমধ্যেই খরচ করে ফেলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইফতার মাহফিলে তাঁর পক্ষে ভোট চাইছেন সরকারের মন্ত্রী ও সাংসদেরা। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারও ইফতার মাহফিলে ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছেন। অবশ্য শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ থাকায় দিনে একটির বেশি অনুষ্ঠানে যেতে পারছেন না তিনি।

গত ১৫ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোট গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু সীমানাসংক্রান্ত এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভোটের ৯ দিন আগে ৬ মে হাইকোর্ট নির্বাচন স্থগিত করেন। পরে আপিল বিভাগ সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে ২৮ জুনের মধ্যে নির্বাচন করার আদেশ দেন। এরপর নির্বাচন কমিশন ভোটের নতুন তারিখ ঘোষণা করে ২৬ জুন। একই সঙ্গে ১৮ জুনের আগে কোনো প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন না বলে কমিশন জানায়।

গতকাল রোববার আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম পাঁচটি ইফতার মাহফিলে অংশ নেন। বিকেল পৌনে পাঁচটায় সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের শিমুলতলী এলাকার ইফতার মাহফিলে অংশ নেন তিনি। সেখান থেকে চলে যান ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) ক্যাম্পাসে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে। মাগরিবের আজান পর্যন্ত তিনি ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে আরও ২টি এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে আরেকটি ইফতার মাহফিলে অংশ নেন।

জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক প্রচারণা বন্ধ থাকলেও ভোটের রাজনীতি সচল রেখেছি। সামাজিকতা বন্ধ নেই। ইফতার, আলোচনা সভা করছি। সবার কাছে যাচ্ছি। বিকেল থেকে মাগরিবের আজানের আগ পর্যন্ত প্রতিটি সেকেন্ড হিসাব করে ছুটছি।’ ইফতার মাহফিল আয়োজনের ব্যয় তিনি নিজেই বহন করছেন বলে জানান।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে একজন মেয়র পদপ্রার্থী প্রচারণায় ব্যয় করতে পারবেন ৩০ লাখ টাকা। দিনে চারটি ইফতার মাহফিল আয়োজন করলে ২৩ রমজান পর্যন্ত কমপক্ষে ৯২টি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছেন। একেকটি ইফতার মাহফিলে গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষ থাকেন। প্রতিটি ইফতার মাহফিলে অন্তত ২৫ হাজার টাকা খরচ হয় বলে তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত কর্মীরা জানান। সে হিসাবে ইফতার মাহফিল বাবদ গতকাল পর্যন্তই জাহাঙ্গীর আলম খরচ করেছেন ২৩ লাখ টাকা।

সময়ের আগেই প্রচারণা চালানোর বিষয়ে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো উপায়ে প্রচারণা চালালে সেটি আচরণবিধির লঙ্ঘন। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন তাঁরা। ইফতার মাহফিলে ভোট চাওয়ার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি।

গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী ছায়েদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলম রমজানের প্রথম থেকেই ব্যানার টাঙিয়ে, মাইক লাগিয়ে বিশাল আয়োজন করে ইফতার মাহফিল করছেন। কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা খরচ করেছেন তিনি। আর মন্ত্রী, সাংসদেরা প্রকাশ্যে ভোট চেয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিষয়টি মৌখিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন তাঁরা।

গাজীপুরের টঙ্গীর মধুমিতা রোড এলাকায় ইফতার মাহফিলে হাসান উদ্দিন সরকার।  প্রথম আলো
গাজীপুরের টঙ্গীর মধুমিতা রোড এলাকায় ইফতার মাহফিলে হাসান উদ্দিন সরকার। প্রথম আলো

সময়ের আগে ভোট চাওয়ার বিষয়ে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ইফতার মাহফিল আয়োজন করা যেতেই পারে। তিনি বলেন, মন্ত্রী, সাংসদেরা এসে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট চাইছেন। বিএনপির প্রার্থীকে নির্বাচিত করলে বাজেটে বরাদ্দ থাকবে না, এসব কথা বলে সব প্রার্থীর সমান সুযোগ নষ্ট করা হচ্ছে।

এদিকে জাহাঙ্গীর আলমের বিভিন্ন ইফতার মাহফিলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানক, গাজীপুর-২ আসনের সাংসদ জাহিদ আহসানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

গত শুক্রবার মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ইফতার মাহফিলে বলেন, সরকার বাজেটে গাজীপুরের উন্নয়নে ১২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। জুনের পরও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে। জাহাঙ্গীরই উন্নয়ন বাজেট সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবেন।

গতকাল গাজীপুর জেলা পুলিশের ইফতার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মেহের আফরোজ। সেখানে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চান তিনি। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী উপস্থিত ছিলেন।