পাহাড়ে আরও ভূমিধসের আশঙ্কা, উপকূলে ৩ নম্বর সতর্কতা

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে এখন লঘুচাপ হিসেবে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও বাংলাদেশের কুমিল্লায় অবস্থান করছে। এর মধ্যে মৌসুমি বায়ু রাজশাহী ছাড়া দেশের বাকি ছয়টি বিভাগের ওপর বিস্তার ঘটেছে। এই দুইয়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওপর কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, এ কারণে চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও আরও ভূমিধস হতে পারে।

গতকাল সোমবার রাতে ও আজ মঙ্গলবার ভোরে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড়ধসে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাহাড়ধসে উপজেলার সাবেক্ষং ইউনিয়নের বড়পুলপাড়ায় চারজন, বুড়িঘাট ইউনিয়নের ধর্মচরণ পাড়ায় চারজন ও ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের হাতি মারা গ্রামে তিনজনের মৃত্যু হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, প্রবল মৌসুমি বায়ুর কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে আজ বেলা ১১টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এই বৃষ্টির পরিমাণ ৪৪ থেকে ৮৯ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

মৌসুমি বায়ু উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকা প্রবল অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই এলাকায়ও গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকা এবং চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌযানগুলোকে গভীর সাগরে না গিয়ে উপকূলের কাছাকাছি সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

মৌসুমি বায়ুর বিস্তার ঘটায় খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের ওপর তুলনামূলক বেশি বৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে গতকাল সকাল ছয়টা থেকে আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ২৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে রাঙামাটি জেলায়। এ ছাড়া চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ১৯৬, সন্দ্বীপে ১৬১, নোয়াখালীর মাইজদী কোর্টে ১৩৬, খুলনায় ১২৪, কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ৯০, পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ৮১, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৫২ ও বরিশালে ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

বৃষ্টির কারণে কয়েক দিন ধরে বয়ে যাওয়া দাবদাহ কেটে গেছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুর ৩৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্য বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহে ৩২ দশমিক ৭, চট্টগ্রামে ৩০ দশমিক ৪, সিলেটে ৩০ দশমিক ২, রাজশাহীতে ৩৫ দশমিক ৬, রংপুরে ৩৩ দশমিক ৬, খুলনায় ২৯ দশমিক ৮ এবং বরিশালে তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বৃষ্টি ও মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ার প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে আগামী তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টি কমে আসার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে আজ সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নৌবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেওয়া হয়েছে।