দুর্ভোগের নগর চট্টগ্রাম

টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে জলাবদ্ধ চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা। গতকাল দুপুর ১২টায় ।  ছবি: সৌরভ দাশ
টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে জলাবদ্ধ চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা। গতকাল দুপুর ১২টায় । ছবি: সৌরভ দাশ
>
  • চট্টগ্রাম নগরে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা
  • বাসায় হাঁটুসমান পানি
  • অনেকের আশ্রয় স্বজনের বাড়িতে
  • ঈদের বাজারে প্রভাব

টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরে গতকাল মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিতে সোমবার রাত থেকে নগরের বিভিন্ন এলাকায় ছিল হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি। অনেকে বাসা ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে।
গতকাল বেলা তিনটা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় ৯৪ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া দপ্তর। বৃষ্টিতে নগরের চকবাজার, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, মুরাদপুর, প্রবর্তক মোড়, হালিশহর, কাপাসগোলা, বাকলিয়া ডিসি রোডসহ বিভিন্ন এলাকা কয়েকবার করে জলমগ্ন হয়। চরম দুর্ভোগের শিকার হয় সাধারণ মানুষ।
গতকাল দুপুর ১২টায় নগরের চান্দগাঁও থানার খাজা রোডের কসাইপাড়া, বহদ্দারবাড়ি, বোছন মিস্ত্রির বাড়ি এবং সিদ্দিক খলিফাপাড়া এলাকায় হাঁটুসমান পানি দেখা যায়। এখানকার শতাধিক বাড়ির নিচতলায় পানি ওঠে।
সিদ্দিক খলিফাপাড়ার একটি একতলা ঘরে দেখা যায়, পানি থেকে বাঁচতে ঘরের বাসিন্দারা খাটের ওপর চেয়ার বসিয়ে সেখানে বসে আছেন। এ ছাড়া ফ্রিজসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র একটি বড় টেবিলের ওপর তুলে রাখা হয়েছে।
এই ঘরের মালিক ইয়াছমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, রোববার রাত থেকেই ঘরে পানি ঢুকছে। খাট পর্যন্ত ডুবে গেছে। তার জন্য বাসায় রাতযাপন করতে পারছেন না। পরিবারের চার সদস্য দিনের বেলায় নিজের বাসার খাটের ওপর চেয়ার বসিয়ে বসে থাকেন। রাতে পাশের একটি ভবনে আত্মীয়দের ঘরে ঘুমান।
একই কথা বলেন, বোছন মিস্ত্রি বাড়ির বাসিন্দা স্থানীয় একটি দোকানের মালিক সেলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাসা নিচতলায় হলেও গতবারের চেয়ে মেঝে কয়েক ইঞ্চি উঁচু করেছিলাম। কিন্তু টানা বৃষ্টি হওয়ায়
ঘরে পানি ঢুকে গেছে। তিন দিন ধরে আত্মীয়ের বাসায় রাত কাটাচ্ছি।’

পানিতে তলিয়ে যাওয়া সড়কে এক ফল বিক্রেতা। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায়।  প্রথম আলো
পানিতে তলিয়ে যাওয়া সড়কে এক ফল বিক্রেতা। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায়। প্রথম আলো

এ ছাড়া বহদ্দারহাট শাহ আমানত সংযোগ সড়কের বেশ কিছু এলাকায় হাঁটুসমান পানি উঠেছে। খানাখন্দে ভর্তি সড়ক দিয়ে চলাচলের সময় রিকশা এবং ছোট গাড়ি উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সংযোগ সড়কের স্থানীয় দোকানি মোহাম্মদ হানিফ জানান, গত সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সড়কের গর্তে এবং নালায় পড়ে অন্তত ৩০টি রিকশা উল্টে যেতে দেখেছেন তিনি।
পানিতে তলিয়ে যাওয়া সড়কগুলোতে যানবাহন ও পথচারীদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ঘোলা পানির কারণে বোঝা যাচ্ছিল না রাস্তার কোথায় ভাঙা, কোথায় গর্ত। সে কারণে রিকশা, অটোরিকশাসহ হালকা যানবাহনগুলোকে পড়তে হয়েছে বিপাকে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় বহাদ্দারহাট পুকুর এলাকায় দেখা যায়, মো. জাহেদ নামে এক যাত্রী রিকশা নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি একটি মুঠোফোন কোম্পানিতে চাকরি করেন। তাঁর রিকশাটি যেতে যেতে হঠাৎ পড়ে যায় নালার মধ্যে। পানির জন্য নালা আর সড়ক মিশে একাকার হয়ে যায়। পরে আশপাশের লোকজন তাঁকে টেনে তোলেন।
বৃষ্টিতে নগরের ডিসি রোডে গতকাল কয়েকবার পানি ওঠে। মিজানুর রহমান নামে স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এলাকার বাড়িগুলোর নিচতলায় পানি ঢুকে গেছে। রোজার দিনে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। চকবাজার ধোনিরপুল এলাকায় পানি আর ডাস্টবিনের ময়লা একাকার হয়ে পড়েছিল।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে মুষলধারে বৃষ্টি নামে। সেই সঙ্গে জোয়ারের পানি যুক্ত হয়ে নগরের আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় কোমরসমান পানি ওঠে। পানি ঢুকে এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ির নিচতলায়।

ঈদের বাজারে প্রভাব
বৃষ্টি এবং জলাবদ্ধতার প্রভাব পড়েছে ঈদের বাজারে। বৃষ্টির কারণে মার্কেটে ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক কমে গেছে বলে নিউমার্কেটের পাবনা শাড়ি বিতানের মালিক শাহদাত হোসেন জানান। রেয়াজউদ্দিন বাজারের প্রগতি ক্লথ স্টোরের স্বত্বাধিকারী সাখাওয়াত বিন আমিন বলেন, মধ্যবিত্তের প্রধান ভরসা রেয়াজউদ্দিন
বাজার। আবহাওয়া প্রতিকূল। বাজারে পানি উঠেছে। রাস্তায় পানি। মানুষ বাজারে আসতে পারছে না। বিক্রিবাট্টা কম।

ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তা
পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপজনিত কারণে এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি পাহাড়ধসের সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, মোংলা, কক্সবাজার ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সাগরে অবস্থানরত নৌযান এবং ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
গতকালও নগরের বিভিন্ন পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের সরিয়ে দিতে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জানান, নিরপাদ অবস্থানে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং চলছে। স্থানীয় কাউন্সিলর এবং প্রশাসন
বিভিন্ন পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে সচেষ্ট রয়েছে।