সুনামগঞ্জে চুরির অভিযোগে দুই শিশুকে বেঁধে লাঠিপেটা

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নে চুরির অভিযোগ তুলে দুই শিশুকে দড়ি দিয়ে বেঁধে লাঠিপেটা করার অভিযোগ উঠেছে। দুই শিশুকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলাজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নয় দিন আগের ওই ঘটনায় আজ বুধবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন এক শিশুর বাবা।

নির্যাতনের শিকার দুই শিশু হচ্ছে রানীগঞ্জ ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের দিনমজুর সফিক আলীর ছেলে সুলেমান মিয়া (১২) এবং পাইলগাঁও ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের লেবু মিয়ার ছেলে লেচু মিয়া (১০)।

নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে যে দুই যুবকের বিরুদ্ধে, তাঁরা হলেন রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বাঘময়না গ্রামে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সুন্দর আলীর ছেলে শানুর মিয়া ও একই গ্রামের এখনাছুর রহমানের ছেলে স্থানীয় পর্যায়ের জামায়াত নেতা আবুল কাশেম।

এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার শিশু সুলেমান মিয়ার বাবা সফিক আলী আজ বুধবার জগন্নাথপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে তিনি অভিযোগ করেছেন, শানুর মিয়া ও আবুল কাশেম ৪ জুন রানীগঞ্জ বাজারে চুরি অপবাদে তাঁর ছেলে সুলেমান মিয়া ও লেবু মিয়ার ছেলে লেচু মিয়াকে রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান এবং বাঘময়না গ্রামের বাসিন্দা রইছ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে আটকে রাখেন। পরদিন ৫ জুন দুপুরে রইছ উদ্দিনের বাড়িতে বৈঠক ডেকে ওই দুই শিশুকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে জগন্নাথপুর থানার পুলিশের কাছে দুই শিশুকে হস্তান্তর করলে কোনো অভিযোগ না থাকায় পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়।

সফিক আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দিনমজুর মানুষ। আমার ছেলেকে অন্যায়ভাবে মারধর করা হয়েছে। আমরা গরিব হতে পারি, কিন্তু চোর না।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রভাবশালী নির্যাতনকারীদের হুমকিতে আইনের আশ্রয় নিতে পারিনি। ভিডিও ফুটেজ দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি। তাই ছেলের চিকিৎসার পর মামলা করেছি।’ ওই ঘটনার কারণে যত দিন যাচ্ছে, ততই তাঁর ছেলে ভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে তিনি জানান।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, দুই শিশুর হাত রশি দিয়ে বেঁধে দুই যুবক লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে। কৌতূহলী লোকজন তা দেখছে। কেউ ভিডিও করছে। আবার কেউ মারধরে সহযোগিতা করছে। ‘ও মাই গো’ বলে শিশুরা চিৎকার করলেও নির্যাতনকারীদের মন গলেনি।

রানীগঞ্জ বাজার তদারক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন জানান, ৪ জুন রানীগঞ্জ বাজারের ফ্যামিলি শপ নামের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে চুরির ঘটনা ঘটে। দোকান মালিক সাজু মিয়া লক্ষাধিক টাকার মালামাল চুরি হয়েছে দাবি করে বাজারে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি কারও কাছে অভিযোগও করেননি। চুরির সঙ্গে জড়িত সুনির্দিষ্ট কারও নামও উল্লেখ করেননি। ওই সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সুন্দর আলীর ছেলে শানুর মিয়া ও স্থানীয় জামায়াত নেতা আবুল কাশেম নিজেরাই চোর ধরার উদ্যোগ নেন। তাঁদের এমন বর্বর নির্যাতন এলাকাবাসীকে বিস্মিত করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আজমল হোসেন আরও বলেন, ‘কিসের ভিত্তিতে তাঁরা শিশু দুটিকে চোর সাব্যস্ত করলেন জানা যায়নি। ওই দুই শিশুর কাছে চুরির কোনো মালামাল পাওয়া গেছে এমন কথাও শুনিনি।’

এ ঘটনায় আবুল কাশেম ও শানুর মিয়ার মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করেও তাঁদের পাওয়া যায়নি।

জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, চুরির অভিযোগে এলাকাবাসী আটক দুই শিশুকে ৫ জুন থানায় হস্তান্তর করে। অভিভাবকদের মুচলেকায় ওই দুই শিশুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আজ এক শিশুর বাবা লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।