দীঘিনালার চার ইউনিয়নের ১২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২১০০ পরিবার

বন্যার পানিতে গ্রাম তলিয়ে গেছে। ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে লোকজন। বোয়ালখালী, দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি, ১৩ জুন। ছবি: পলাশ বড়ুয়া
বন্যার পানিতে গ্রাম তলিয়ে গেছে। ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে লোকজন। বোয়ালখালী, দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি, ১৩ জুন। ছবি: পলাশ বড়ুয়া

খাগড়াছড়ি জেলা সদরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটলেও দীঘিনালা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। দীঘিনালার চারটি ইউনিয়নের ১২টি আশ্রয়কেন্দ্রে আছে ২ হাজার ১০০ পরিবার।

ইতিমধ্যে বন্যার্ত মানুষের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে এ পর্যন্ত ২১ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারী বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া ও নদী-ছড়া দখলকারীদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সোমবার দিবাগত রাতের আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এর মধ্যে আজ বুধবার চেঙ্গীনদীর পানি কমতে শুরু করায় জেলা সদরের পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো মুসলিমপাড়া, খবংপুড়িয়া, কালাডেবা, গঞ্জপাড়ার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা রয়েছে। অন্যদিকে জেলার দীঘিনালার অবস্থা অপরিবর্তিত থাকায় এখনো পানিবন্দী হয়ে আছে প্রায় ছয় হাজার পরিবার। উপজেলা প্রশাসনের হিসাবমতে, এখানকার ১২টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ২ হাজার ১০০ পরিবার। বাকিরা মাচা, ঘরের চালা বা উঁচু কোনো স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। পানিবন্দী মানুষদের মধ্যে খাগড়াছড়ি সদরের আটটি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হয়েছে ৪০০টি পরিবারের।

প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ধসে গেছে মাটির ঘর। সুধীর মেম্বার পাড়া, দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি, ১৩ জুন। ছবি: পলাশ বড়ুয়া
প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ধসে গেছে মাটির ঘর। সুধীর মেম্বার পাড়া, দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি, ১৩ জুন। ছবি: পলাশ বড়ুয়া

সড়কের ওপর পানি থাকায় এবং মাটিরাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ধসের কারণে মঙ্গলবার খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি-ফেনী-ঢাকা সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হলেও আজ সকাল থেকেই যান চলাচল করতে শুরু করেছে। তবে, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়কে যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে। খাগড়াছড়ি-পানছড়ি, দীঘিনালা-লংগদু ও দীঘিনালা-বাঘাইছড়ি সড়কে সরাসরি গাড়ি চলাচল বন্ধ আছে।

পাহাড়ি ঢলে ফেনী নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার রামগড়ের বিভিন্ন এলাকায় পানি উঠেছে। সেখানে চারটি আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন অন্তত ৩০০ পরিবার। ফেনি নদীর পানি কমছে খুব ধীরে। ফলে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িগুলো এখনো পানির নিচে। রামগড়ের ফেনীরকূল এলাকায় রামগড়-ফেনী সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ছোট যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

বন্যার পানিতে দীঘিনালার মেরুং সরকারি খাদ্যগুদাম তলিয়ে যাওয়ায় ৩৫ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, এলএসডি) পিনাকী দাশ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, খাদ্যগুদামে এখনো পানি রয়েছে।

আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া বন্যাকবলিত লোকজন। মধ্য বোয়ালখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দীঘিনালা, ১৩ জুন। ছবি: পলাশ বড়ুয়া
আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া বন্যাকবলিত লোকজন। মধ্য বোয়ালখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দীঘিনালা, ১৩ জুন। ছবি: পলাশ বড়ুয়া

আজ বুধবার সকালে দীঘিনালার সুধীর মেম্বার পাড়া, বাবুপাড়া, মধ্য বোয়ালখালী, পাবলাখালীসহ বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বন্যার পানিতে দুই শতাধিক গ্রাম তলিয়ে রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের হিসাবমতে, এসব এলাকায় গৃহহীন হয়ে পড়েছে প্রায় ছয় হাজার পরিবার। স্থানীয় লোকজনের হিসাব অনুযায়ী, এসব এলাকায় তিন শতাধিক পুকুর ও জলাশয় ডুবে কয়েক কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। প্রবল বর্ষণের কারণে কোনো কোনো জায়গায় মাটির ঘর ধসে গেছে। যেমন উপজেলার সুধীর মেম্বার পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ি ঢলে সেখানকার ১৪টি ঘর ধসে গেছে। পরে এই ১৪টি পরিবারের ৭০ জন নারী-পুরুষ স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়।

জেলা সদর ও দীঘিনালার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, তারা এ পর্যন্ত বন্যার্ত মানুষের জন্য ২১ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দিয়েছে।