কুলাউড়ায় মনু নদের বাঁধ ভেঙে ৩৮ গ্রাম প্লাবিত

মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘর। গণকিয়া গ্রাম, পৃথিমপাশা ইউনিয়ন, কুলাউড়া উপজেলা, বিকেল চারটা, ১৩ জুন। ছবি: প্রথম আলো
মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘর। গণকিয়া গ্রাম, পৃথিমপাশা ইউনিয়ন, কুলাউড়া উপজেলা, বিকেল চারটা, ১৩ জুন। ছবি: প্রথম আলো

অতিবৃষ্টি, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের কয়েকটি স্থান ভেঙে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার প্রায় ৩৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আজ বুধবার উপজেলার শরীফপুর, টিলাগাঁও ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের এসব গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া তলিয়ে গেছে বেশ কিছু পাকা ধানের খেত।

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে গত রোববার থেকে কুলাউড়ায় লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে আজ বুধবার ভোরে শরীফপুর ইউনিয়নে মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের পাঁচটি স্থান ভেঙে যায়। এতে ওই ইউনিয়নের চানপুর, পূর্বভাগ, বাগজোড়, তেলিবিল, হরিপুর, শরীফপুর, সঞ্জবপুর, লালারচক, ইটারঘাট, কালারায়ের চর, সঞ্জরপুর, মনোহরপুর, দত্তগ্রাম, মাদানগর, নিশ্চিন্তপুর, সোনাপুর ও মানগাঁও গ্রাম প্লাবিত হয়। টিলাগাঁও ইউনিয়নের বলিয়ারা গ্রামে বাঁধ ভেঙে এটি, লালপুর, মিয়ারপাড়া, সন্দ্রাবাদ, সাজেদাপুর, তাজপুর, গন্ডারগড়, কামালপুর, পাল্লাকান্দি, মিরপুর, বালিয়া, সালন, দড়িতাজপুর, বাগরিহাল, বৈদ্যশাসন, কাজীরগাঁও ও লহরাজপুর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া পৃথিমপাশার বৈশারকুল এলাকায় বাঁধ ভেঙে এটিসহ আলীনগর ও গণকিয়া গ্রাম প্লাবিত হয়।

শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জোনাব আলী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর এলাকার অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। দুই শতাধিক কাঁচা বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা আক্রান্ত লোকজন বাঁধের উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। ৬০০ একর জমির পাকা আউশ ধান পানির নিচে। মনু সেতুর পাশ দিয়ে বাঁধে ভাঙন ধরায় এটি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে চাতলাপুর শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে।

টিলাগাঁও ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল মালিক বলেন, বলিয়ারায় প্রতিরক্ষা বাঁধের প্রায় ৪০০ ফুট জায়গা ভেঙে গেছে। এতে ১৭ গ্রামের অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দী। বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে ৫০ থেকে ৬০টি পরিবার। ৭০০-৮০০ একর জমির আউশ ধানের খেত নিমজ্জিত হয়ে গেছে।

পৃথিমপাশা ইউপির চেয়ারম্যান নওয়াব আলী বাকর খান বলেন, বৈশারকুলের ভাঙন দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। এ ছাড়া সালিকা, গজভাগ, ধলিয়া, বেলেরতল ও কলিরকোনা এলাকায় বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, দুপুরের দিকে মৌলভীবাজার-২ আসনের সাংসদ আবদুল মতিন, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ স ম কামরুল ইসলাম, ইউএনও চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী টিলাগাঁও এবং শরীফপুর ইউনিয়নের বন্যাপ্লাবিত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শনে যান।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বন্যাক্রান্ত লোকজনের জন্য মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন ৫০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তবে এখনো তা পাওয়া যায়নি। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে দুর্গত লোকজনকে শুকনো খাবার দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, কুলাউড়ায় মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের কয়েকটি স্থানে ভাঙনের বিষয়টি তাঁরা জেনেছেন। পানি কমার আগ পর্যন্ত এসব স্থানে মেরামত কাজ করানোর কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, মনু নদের কুলাউড়ার মনু রেল সেতু পয়েন্টে বেলা তিনটার দিকে বিপদসীমার ১৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। ২০০৭ সালের পর মনু নদে এ রকম আর পানি বাড়েনি।